ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
সারাদেশে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ১৫৬৭
নোয়াখালীতে ৮হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
টাকা আত্মসাত করতে অন্তঃসত্বা ছোট বোনকে হত্যা:গ্রেফতার ২
কলমাকান্দায় দেশীয় রিভলবারসহ শ্যালক গ্রেফতার, ভগ্নিপতি পালিয়েছে
রূপগঞ্জে ছাত্রদল নেতার গুলিতে ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
বিরামপুর সীমান্তে ১৫ জনকে বিএসএফের পুশইন
মধুখালী উপজেলায় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান
রুপসায় আবারো গুলি করে বিকাশ ব্যবসায়ীর টাকা লুট
ইসরায়েলের হামলা; ইরানের পাশে দাঁড়াল সৌদি আরব
কলমাকান্দায় ভারতীয় মদ জব্দ
হাতিয়া প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির সাথে মাহবুবের রহমান শামীমে’র মতবিনিময়
গাইবান্ধায় ব্যবসায়ীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
ঘোড়াঘাটে নবগঠিত শ্রমিক দলের ঈদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠিত
ঘোড়াঘাটে গরুসহ ২ চোরকে ধরিয়ে দিলেন ট্রাকচালক
আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কৃষকলীগ সোহরাব হোসেন বুলবুল গ্রেফতার

অদৃশ্য শক্তির ছায়াতলে এখনো বেপরোয়া নিষিদ্ধ আ’লীগের চেয়ারম্যান’রা

মশিউর রহমান নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:সদ্য ঘোষিত নিষিদ্ধ সংগঠন আ’লীগের নেতা রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে বিজয়ী হওয়া পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও মন্ত্রী শ.ম রেজাউলের একান্ত সহচর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ৫ নং শাঁখারীকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান মো: খালিদ হোসেন (সজল) ও ২ নং মালিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি রুহুর আমিন বাবলু দাড়িয়ার ‘রাজত্ব’ বহাল রয়েছে। এখনো এলাকায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব দেখাচ্ছেন।

বিগত ১৬ বছরের মতো এখনো ইউপি চেয়ারম্যান এলাকার সব সালিশ-দরবার এবং অবৈধ ইটের ভাটা বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে এলাকার জনসাধারণের মাঝে ফ্যাসিবাদের আতঙ্ক কাটেনি। এদিকে আ.লীগের ১৬ বছর সব ধরনের অপকর্ম করে এই ইউপি চেয়ারম্যান’রা এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে থাকেন এমন নানা প্রশ্ন এলাকাবাসীর মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে স্থানীয় কিছু রাজনৈতীক নেতাদের ম্যানেজ করেই তারা রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি এলাকাবাসীদের।

রুহুল আমিন বাবলু দাড়িয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যের জমি দখল করে চালিয়ে যাচ্ছে এ ইটভাটা। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনের নেই কোন কার্যকরী ভূমিকা। তবে প্রশাসন বলছেন একবার জরিমানা করেছি একটি ভাটায়। মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশ ও দিয়েছি, জমি দখলের অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি, আমরা দ্রæতই ইটভাটায় আবারও অভিযান পরিচালনা করবো। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ২০২৩ সালেই হয়েছে মেয়াদ উত্তীর্ণ। জেলা প্রশাসক কর্তৃক লাইসেন্সের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৩ সালে। অবৈধ ইটভাটর এসব অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়ছে না উপজেলা প্রশাসনের।

মালীখালী গ্রামের বিধুর চৌধুরী বলেন, সরকারি কবুলিয়ত প্রাপ্ত জমি পেয়েও ভোগ করতে পারছি না, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছে আমার জমি। আপনাদের কাছে বললে হবে কি আপনারা কিছুই করতে পারেন না ৫ আগষ্টের পরেও আমারা আমাদের জমি ফেরত পাই না এজন্যই কি আসলে ৫ই আগষ্টের সৃষ্টি হয়েছে।

এই ইট ভাটা অসহায় দরিদ্র মানুষের কবুলিয়ত প্রাপ্ত জায়গা দখল করে বীরদর্পে চলছে, দেশে সরকার বদল হয়েছে ঠিক কিন্তু বদলায়নি ফ্যাসিবাদি কর্মকান্ড। আর এরই পিছনে শেল্টার দিচ্ছে অদৃশ্য শক্তি।

এদিকে নানা অপরাধে জড়িত ৫ নং শাঁখারীকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন সজল এখনও বীরবেশে পরিষদ চালিয়ে যাচ্ছেন। আ’লীগ থাকাকালীন স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারকে (হরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী) কে মৃত্যু ও বেওয়ারিশ দেখিয়ে তার ই বোন বিল্লু বাসিনীর দুই পুত্র সন্তানকে (সতীন্দ্রনাথ রায় ও জীতেন্দ্রনাথ রায়) ওয়ারিশ দেখিয়ে ওই এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: জাকির হোসেনের স্ত্রী হেনা বেগম সহ ৭ জন গ্রহীতা {(সতীন্দ্রনাথ রায় ও জীতেন্দ্রনাথ রায়)} কে দাতা বানিয়ে মোট ১৪২ শতাংশ জমির একটি দলিল করিয়ে দেন। জানা গেছে, হরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী তিনি জীবিত রয়েছেন এবং তাহার দুই পুত্র রাম চন্দ্র মিস্ত্রী ও রমেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী রয়েছেন। বর্তমানে তারা ভারতে বসবাস করছেন।
এদিকে হরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী বিগত ০৫.১২.২০০৪ ইং সালে জোহরা বেগমের নিকট ২৯৪৬ নং সাব কবলা দলিল মূলে ৫৯ শতাংশ জমি কবলা দেন এবং ২৭.১২.২০০৪ ইং তারিখ ৩১৯৩ নং সাব কবলা দলিল মূলে তোফাজ্জল হোসেনের কাছে ৫৯ শতাংশ জমি কবলা দিয়া দখল বুঝিয়ে দেন এবং একই লোকের কাছে ৬১ শতাংশ জমি সব কবলা চুক্তিনামা দিয়ে যায়। একই জমি উক্ত ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ও চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন সজল জাল ওয়ারিশ তৈরী করে জাকিরের স্ত্রী সহ ৭ জনের নামে একটি জাল দলিল করেন যাহার দলিল নং-২৭২৫।

ঘটনার সদস্য যাচাইয়ের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন সজল ও সদস্য মো: জাকির হোসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের ফোনে পাওয়া যায় নাই।

গত ৫ ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শ.ম রেজাউল আত্মগোপনে থাকলেও তার অনুসারি চেয়ারম্যানরা এলাকায় বহাল তবিয়তে আছেন। এমনকি অবৈধ সব ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ড ধরে রেখেছেন তারা এবং আওয়ামীলীগ নেতাদের সব অবৈধ সম্পত্তির পাহরার দিচ্ছেন। এ তালিকায় হাফ ডজন ইউপি চেয়ারম্যান ও অর্ধশত ইউপি সদস্য রয়েছেন। তবে তারা সবাই যে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী এমনটি নয় এদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সভাপতি একেএম আউয়ালের অনুসারীরাও।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা জানান, এ সব ইউপি চেয়ারম্যানেরা বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি জমি দখল, সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

এদিকে গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন হলে কয়েক দিনের জন্য থমকে যান এই চেয়ারম্যান’রা। এক সপ্তাহের মধ্যেই রহস্যজনক কারণে আবারও তারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম।

এলাকার লোকজন বলছেন, দেশে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও নাজিরপুরে ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এখনো আ.লীগের সংসদ-সদস্য শ.ম রেজাউলের পরিবারের আধিপত্য এবং আওয়ামীলীগের শাসন চলছে। ফ্যাসিস্ট পতনের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রশাসনিক ভ‚মিক দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিএনপির ডজন খানেক নেতা জানান, আ’লীগের এই সব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদেরসহ আ’লীগের অনেক নেতাদের আমাদের দলের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে। যার ফলে প্রশাসনেরও ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন তারা।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো: আবু হাসান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ আওয়ামীলীগের ব্যাপক আনাগোন দেখা যাচ্ছে। নিরব ভ‚মিকায় প্রশাসন। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তারা প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে তা আমার জানা নাই, এরা মাদক ব্যবসা সহ সকল প্রকার অবৈধ ব্যবসা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এর তিব্র নিন্দা জানাই। এবিষয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। এদেরকে দ্রæত আইনের আওতায় আনার জোড় দাবী জানাই।

এ বিষয়ে নাজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো: মাহামুদ আল-ফরিদ ভ‚ইয়া বলেন,তাদের দুজনের নামেই মামলা রয়েছে এবং দুজনেই জামিনে রয়েছে।

শেয়ার করুনঃ