
দুস্থ সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি অনুদান বিতরণ ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারণ, ‘অস্বচ্ছল’ পরিচয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে এই অনুদান নিয়েছেন এমন অনেকেই বাস্তবে আর্থিকভাবে সচ্ছল। পূর্বেও এরকম কয়েকবার অসুস্থ দোস্ত হিসেবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা নেন অনেকে।
মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় জেলার ২১ জন সাংবাদিকের মাঝে মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক সত্যিকারের অস্বচ্ছল হলেও বাকিদের অনেকেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, চেক পাওয়াদের কয়েকজন মালিকানাধীন বহুতল ভবনে বসবাস করেন, কেউ কেউ একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক কিংবা অভিজাত ভবনে ভাড়া থাকেন। একজন ব্যক্তিগত ক্লিনিকের মালিক, আরেকজন ১৫ বছর ধরে কম্পিউটার ব্যবসা করছেন এবং স্থানীয় একটি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। একজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি জমা। কিছু অনুদানপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বলে জানা গেছে।
যদিও অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন প্রকৃতই অসুস্থতা, বেকারত্ব বা পারিবারিক কষ্টের মধ্যে আছেন, তবে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীদের আর্থিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের দায়িত্ব জেলা তথ্য কর্মকর্তার। তবে এবারের ঘটনায় সেই যাচাই-বাছাই আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
“যদি সঠিকভাবে যাচাই করা হতো, তাহলে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরা কখনোই এই তালিকায় থাকতেন না,” বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সিনিয়র সাংবাদিক। “সরকার কি কোনো যাচাই ছাড়াই রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা বিলিয়ে দিচ্ছে?”- এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এই ঘটনার জেরে জেলার সাংবাদিক মহলে অসন্তোষ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ বিষয়ে কালের কণ্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু বলেন,’বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও জঘণ্য। সচ্ছল সাংবাদিকেরা যদি নিজেদেরকে ‘অসচ্ছল’ পরিচয় দিয়ে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে প্রকৃত অসচ্ছলদের সরকারি এই অনুদান হাত পেতে নিয়ে থাকেন, তাহলে অনুদান পাওয়া সমাজের ‘বিবেক’ খ্যাত সেসব সাংবাদিকেরা সাংবাদিকতার মতো এমন মহান পেশায় থেকে অন্যের অনৈতিকতা নিয়ে এখন আর রিপোর্ট করতে পারবেন না। কারণ সেই নৈতিকতা তারা হারিয়েছেন। আমি মনে করি, এদের ছবিসহ তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিৎ।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা তথ্য কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাস বলেন, “অধিকাংশ আবেদনকারী নিজেদের অসুস্থ দেখিয়ে মেডিকেল সনদ জমা দেন। সেই কাগজের ভিত্তিতেই আমরা তাদের আবেদন অনুমোদন করি।”
তবে কীভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরাও দুস্থদের কোটায় অনুদান পেলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি অনুরোধ জানান, যেন এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না করা হয়।
উল্লেখ্য, চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার প্রিন্স সরকারের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাস এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন-আহব্বায়ক এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান পারভেজ।