বরগুনার বেতাগীতে জামাইয়ের বাড়িতে দাওয়াত দিতে গিয়ে মারধর, হামলার শিকার হয়েছেন শশুর ও দাদা শশুর। এ সময় দাদা শশুরের পা ভেঙ্গে দেওয়া হলেও অল্পের জন্য মেয়েকে নিয়ে শশুর পালিয়ে জীবন রক্ষা পেয়েছে এমনই অভিযোগ ভ’ক্তভোগিদের।
এতে গুরুতর আহত সরোয়ার হোসেন হাওলাদার (৫৫)কে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। মঙ্গলবার উপজেলার বেতাগী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ রানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, ঐ ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরু মৃধার পুত্র মো. মামুন মৃধার সাথে পাশ^বর্তী ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার পালট গ্রামের এনামুল হক নয়নের মেয়ে নুসরাত জাহান আছিয়ার সাথে এক বছর আগে বিবাহ হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্ত্রীর উপর নির্যাতন শুরু করে মামুন মৃধা এবং দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে আসে। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও কথার কাটাকাটি হয়, এমনকি মামুন তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় শারীরিকভাবেও নির্যাতন করতো। যৌতুক না দেওয়ায় বিগত ৪ মাস স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে যেতে দেয়নি।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে মামুনকে দাওয়াত দিতে তার বাড়িতে যান শশুর আলহাজ্ব এনামুল হক ও দাদা শশুর সরোয়ার হোসেন। বাড়িতে আসার পর জামাই মামুন মৃধা শ্বশুরকে সাব জানিয়ে দেয় মেয়েকে নিতে হলে এখান থেকে তালাক ও স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে নিতে হবে, তা না হলে নেওয়া যাবে না। শশুর এনামুল হক এ কথার প্রতিবাদ করলে সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মামুন ও তার লোকজন তাদেরকে পিটিয়ে জখম করে। এতে দাদা শশুর সরোয়ারের একটি পা ভেঙে যায়। মামুন তার শশুর এবং স্ত্রী আছিয়াকে কে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে শশুর এনামুল হক তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। এনামুল হক পালিয়ে আসার পর বেতাগী থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক সারোয়ার হাওলাদারকে উদ্ধার করে। পরে মারাত্মকভাবে আহত সরোয়ার হাওলাদারকে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
মামুনের স্ত্রী নুসরাত জাহান আছিয়া জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে আসািছলো। মাদকাসক্ত আমার স্বামী যৌতুকের দাবিতে প্রায় দিনই রাতে বাইরে নিয়ে আমাকে দেশীয় অস্ত্র (রান্দা) দিয়ে পেটাতো এবং আমার বক্তব্য মোবাইলে ধারণ করতে চাইতো।
শশুর আলহাজ্ব এনামুল হক অভিযোগ করেন, আমার মেয়ের উপর জামাই মামুন ও তার পরিবারের লোকজন প্রতিনিয়তই যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। আমি জামাই বাড়ি যাওয়ার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে যাই। আল্লাহ হয়তো আমাকে ওই নামাজের উসিলায় জীবন রক্ষা করেছেন। আমার চাচার (জামাইর দাদা শশুর)‘র উপর নির্মমভাবে যে ধরনের আক্রমণ করা হয়েছে আমরা পালিয়ে না আসলে আমাদের জীবন আর রক্ষা হতো না। সে এখনো বরিশালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার পায়ের অবস্থাও গুরুতর।
যৌতুকের অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন মৃধা বলেন, বিয়ের বেশ কিছুদিন পর থেকেই আমরা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ চলে আসছে। ঐ দিন কাউকে মারধর কিংবা হামলার ঘটনা ঘটেনি। কথার কাটাকাটির সময় দাদা শশুর পা ফসকে পরে আহত হয় তাছাড়া আর কিছুই নয়।
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মনিরুজ্জামান বলেন, জানার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। থানায় এখনো কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।