ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
গাজীপুর শ্রীপুরে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিতে তরুণীর আত্মহত্যা
অদৃশ্য শক্তির ছায়াতলে এখনো বেপরোয়া নিষিদ্ধ আ’লীগের চেয়ারম্যান’রা
বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি ২০২১ ব্যাচের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
আমতলীতে গৃহবধূকে হয়রানী করার চেষ্টার প্রতিবাদে হামলার স্বীকার আহত ৩
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ৫
প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও আদালত এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
উলিপুরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, দুই বাস কাউন্টারকে জরিমানা
মাতামুহুরি নদীতে ভেসে উঠল পর্যটকের লাশ
‎মাভাবিপ্রবিতে স্নাতক ভর্তিতে আসনসংখ্যা ৮৭৫
রায়পুরে মাদকাসক্ত ছেলের দায়ের কোপে প্রাণ গেল বাবার
সেন্টমার্টিনে কোস্ট গার্ডের আলোচনা সভা ও ত্রাণ বিতরণ
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ১
বাঁশখালীতে মহানবী (সা:) কে কটুক্তিকারী গ্রাম ডাক্তার প্রবীর আটক
গুচ্ছে সাবজেক্ট চয়েসের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল
খুলনায় ডিবি পুলিশের অভিযানে ৬০ কেজি গাজা উদ্ধার

সশস্ত্র মহড়া: ফরিদপুরে যুবদল নেতাদের বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিল স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগ নেতারা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুবদলের একাধিক নেতাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। একই সাথে স্থানীয় বাজারে মব তৈরি করে যুবদলের দুই নেতাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এখন প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার(৯ জুন) বিকাল ও মঙ্গলবার স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বিষয়টি থানাকে অবহিত করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের।

এদিকে যুবদল নেতাদের প্রকাশ্যে লাঞ্চিত ও হত্যার হুমকির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইনামুল হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য তারিকুল ইসলাম মেম্বার ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী কাউসার হোসেন টিটো এবং ইনামুল হাসানের ভাই মাহবুব। তারাই মূলত সোমবার বিকালে যুবদল নেতা শাহেদ ও ঐশিককে স্থানীয় কাঞ্চন একাডেমির পাশে একটি চায়ের দোকানে মব সৃষ্টি করে লাঞ্চিত করে। শাহেদ কামারগ্রাম ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি এবং ঐশিক গোপালপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। যুবদলের দুই নেতাকে লাঞ্চিতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে আলফাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দেন তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে ইনামুল হাসানের নেতৃত্বে মুহুর্তের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়। যাদের মধ্যে প্রায় বিশজন হেলমেট পরিহিত ছিল। একইসঙ্গে তাদের হাতে ছিল— হকিস্টিক, রামদা, ট্যাটাসহ দেশীয় নানান অস্ত্র। সশস্ত্র দলবল প্রথমে স্থানীয় কাঞ্চন একাডেমির মাঠে জড়ো হয়। এরপর যুবদল নেতা শাহেদ ও ঐশিকের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করতে থাকে। তাদেরকে না পেয়ে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রিবন খানের বাড়ি গিয়ে একইভাবে হুমকি দেওয়া সশস্ত্র দলটি।

ভুক্তভোগী শাহেদ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার সময় তিনি স্থানীয় দোকানে বসে কয়েকজন মিলে চা খাচ্ছিলেন। এসময় ইনামুল হাসান বলেন— ‘আমাদের এলাকা আওয়ামী লীগের অধ্যুষিত এলাকা। এখানে বিএনপির কেউ থাকবে না।’ শাহেদ বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিক ইনামুলের কথার প্রতিবাদ করি। এতে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। পরে হঠাৎ মব তৈরি করে আমাকে এবং আমার সহকর্মী ঐশিককে হেনস্তার চেষ্টা করা হয়। পরে সেখানেই আমাদের লাঞ্চিত করা হয়।’

শাহেদ বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার ( ১০ জুন ) ইনামুল তার দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে যায়। এসময় তারা আমাকে গুম না হয় মেরে লাশ পুড়িয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আসে। এরপর থেকে আমি পলাতক রয়েছি।’

আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার পর তাদের বাড়িতে ছুটে যায়। পুরো পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। যেভাবে ইমানুল হুমকি দিয়ে এসে তাতে মনে হয়েছে একটা ক্ষতি করেই ছাড়বে। আওয়ামী দোসরদের কারণে মনে হচ্ছে আমরা এখনও রাজনীতি করতে পারব না। কারণ থানা পুলিশ অভিযুক্তদের ধরছে না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’

কে এই এনামুল?

জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফরিদপুর জেলার সাবেক সহ-সভাপতি এনামুল হাসান ওরফে এনামুল হক নিজ এলাকা আলফাডাঙ্গায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগে মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে আটক করছে না। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

জানা গেছে, এনামুল হক ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ওই পদে থাকা অবস্থায় সে আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; যা প্রায় দেড়বছর বহাল ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও এনামুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল খানের কাছে পরাজিত হন। এনামুল হকের বাড়ি গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামে। তার বাবার নাম কুদ্দুস মোল্লা। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

সূত্র বলছে, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অন্যতম সহযোগী এই এনামুল হক। রহমান ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এলাকায় নানান অপকর্মে জড়িত ছিলো সে। অন্যের জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারি, টিআর-কাবিখার টাকা আত্মসাৎ, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বাড়িতে হামলাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারগুলো থেকেও মাসিক মাসোহারা আদায় করত এই এনামুল হক। এছাড়া আছাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাডার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল।

এদিকে বিএনপির একাধিক নেতা বলছে, গত ১৫বছর এনামুল ও তার সহযোগী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তরিকুল ইসলামের কারণে আমরা পুরোপুরি এলাকা ছাড়া ছিলাম। আলফাডাঙ্গা শহর ও তদসংলগ্ন গোপালপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। বিএনপিমনা ব্যক্তিদের টার্গেট করে করে হয়রানী করা হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এনামুলের আওয়ামী প্রভাব থামেনি।

পলাতক হাসিনাকে ফেরত আনতে ১৩ আগস্ট আলফাডাঙ্গা উপজেলার আরিফুজ্জামান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন চৌরাস্তায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা সড়কের যানচলাচল বন্ধ করে ভাঙচুর চালায়। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শত শত ককটেল ও হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। এই ঘটনায় বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগে আলফাডাঙ্গা থানায় মামলা হয়। সেই মামলার এজাহারনামীয় ৬৫ নম্বর আসামি এনামুল হক এবং তার সহযোগী তরিকুল ইসলামকে ৬৬ নম্বর আসামি। কিছুদিন পলাতক থাকলেও আবার তারা এলাকায় ফিরে এসেছে।

শেখ হাসিনার টেলিগ্রাম মিটিংয়ে এনামুল:

সম্প্রতি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে টেলিগ্রাম মিটিং করেছে শেখ হাসিনা। সেই অনলাইন মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল এনামুল হক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য তরিকুল ইসলাম। ওই মিটিংয়ে আব্দুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। মিটিংয়ে বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সক্রিয় ভাবে মাঠে থেকে পরিকল্পিত নাশকতার ছক ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছেন। আলফাডাঙ্গায় নাশকতা বাস্তবায়নে তারা নিজস্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে মাঠে সক্রিয় হচ্ছে।

সর্বশেষ কথিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আলফাডাঙ্গায় এনামুল বাহিনী নির্বাচনী বুথে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এসময় একাধিক নিরীহ ভোটারকে মারধর, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ এনামুলের নাম বাদ দিয়ে এজাহার দিতে বলে।

চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নয়-ছয়ের অভিযোগ:

নিয়ম ভেঙে অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় একটি খেয়াঘাট ইজারা দেয় গোপালপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এনামুল। পরে ঘাটের ইজারা বাতিল করে উপজেলা প্রশাসন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান একজন মাঝিকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় মাঝি ওবায়দুর রহমান ইনামুলের বিরুদ্ধে আলফাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরি নম্বর-১১৬৮।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রবীণদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন, মামলার আসামি অতঃপর দায় মিটিয়ে বিয়ে বিচ্ছেদও ঘটিয়েছে। তাছাড়া মহল্লাদার বা চৌকিদারের চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়ে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। একাধিকবার তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা।

গৃহহীনদের জন্য সরকারের বিনামূল্যে বরাদ্দকৃত ঘর বিতরণে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে এনামুলের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, শিশু কার্ড বিতরণে আর্থিক লেনদেন এবং বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ঘরে জুয়ার আসর ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ ছিল।

শেয়ার করুনঃ