কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। ১৬ টি নদ-নদী বেষ্টিত এ জেলায় প্রায় চার শতাধিক চরাঞ্চল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলাটিতে টেক্সটাইল মিলস নবায়ন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমসহ নারীদের আত্মকর্ম সংস্থান তৈরিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের প্রশিক্ষণ, বিদেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এরই ধারাবাহিকতায় বিনোদন শূন্য এ জেলায় ধরলা নদীর অববাহিকায় কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলাবাসী। বিনোদন প্রেমী মানুষদের মধ্যে বইছে খুশির জোয়ার।
কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষের বসবাস। বিনোদন প্রেমী মানুষের দীর্ঘ দিনের আশা নদীর পাড়ের একটি বিনোদনের জন্য একটি পার্ক গড়ে উঠুক। অলস সময়ে ইট পাথরের শহর ছেড়ে প্রকৃতি ও নদীর টানে ছুটে আসা মানুষের জন্য ডিসি পার্ক হলে এটি শুধু মানুষের মনোরঞ্জনের খোরাক হবেনা, এটি হলে জেলার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এছাড়া পাশেই গড়ে উঠছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ছুটে আসা মানুষের ক্লান্তিতে স্বস্তি যোগাবে এই পার্কটি। স্থানীয়দের দাবী প্রস্তাব আর প্রস্তাবনার মধ্যে পার্কের কাজটি যেন ব্যাহত না হয়,বঅতি দ্রুত ডিসি পার্কের কার্যক্রম শুরু হোক।
ব্রীজ পাড়ে ঘুরতে আশা শিক্ষার্থী মোঃ আসিফ হাসান বলেন, কুড়িগ্রামে ডিসি পার্ক হলে জেলাকে বাইরের রোল মডেল হিসেবে এই জেলা রিপ্রেজেন্ট হবে। দর্শনার্থীদের সমাগমে পূণর্তা আসবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে জেলার মানুষের উন্নয়ন হবে বলে জানান তিনি।
ধরলা ব্রিজ পাড়ের বাসিন্দা মোঃ আবু সাইদ বলেন, কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক হওয়ার খবর শুনেছি। এটি হলে আশপাশের অনেক মানুষের ব্যবসা বানিজ্য ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক হলে এখানকার মানুষজনের জীবন জীবিকার উন্নয়ন হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহবায়ক মোঃ নাহিদ ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রাম ডিসি পার্কটি বাস্তবায়ন হলে জেলার মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। নামকরনের ক্ষেত্রে আমাদের কোন আপত্তি নেই।যে নামেই হোক না কেন নাম কোন বিষয় না। কুড়িগ্রামের উন্নয়ন হোক এটাই চাই।
নাগরিক কমিটি কুড়িগ্রাম জেলার সংগঠক মোঃ মুকুল মিয়া বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষের বিনোদনের জন্য কোন জায়গা নেই। ধরলা ব্রীজের পূর্ব পাড়ে সরকারের প্রায় ৩০ একর জমি পড়ে আছে। সেখানে কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক হলে জেলাবাসী বিনোদনের একটা জায়গা পাবে। আমরা জেলা সমন্বয় মিটিং এ কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক নামকরন করার মতামত দিয়েছি।জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম জেলার আমীর মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকী বলেন, কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক বা ডিসি পার্ক কুড়িগ্রাম, যে নামেই হোক আমাদের কোন আপত্তি নেই। জেলা সমন্বয় মিটিং এ সকলের মতামত নিয়ে কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক বলে জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, প্রস্তাবিত ডিসি পার্ক নিয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমন্বয় মিটিং এ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারি দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয় কুড়িগ্রামে চিত্ত বিনোদনের জন্য একটি পার্কের প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ধরলা সেতুর পাশের মাধবরাম এলাকায় কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে কুড়িগ্রাম জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা মানুষজন বিনোদনের সুযোগ পাবে। নামকরনের বিষয়ের জেলা প্রশাসকের ব্যাক্তিগত কোন মতামত ছিল না। উপস্থিত সকল প্রতিনিধিদের মতামতে কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক নামকরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, কুড়িগ্রামে চিত্ত বিনোদনের তেমন কোন জায়গা না থাকায় ধরলা ব্রীজের পূর্ব প্রান্তে মাধবরাম এলাকায় জেলার সকল রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের মতামত নিয়ে কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক গড়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এটি হলে সরকারের পড়ে থাকা ৩০ একর পরিত্যক্ত জমির সদ্ব্যবহার হবে পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।আমার উদ্দেশ্য হলো বিনোদন শুন্য জেলাটিতে একটি পার্ক হোক। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় মিটিংয়ে জেলার সকল নেতৃবৃন্দের মতামত নিয়ে কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক করার প্রস্তাব গ্রহন করা হয়েছে।