
ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন,মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। কোরবানির এই উৎসবকে ঘিরে মানুষের মনে যেমন আনন্দ, তেমনি অন্তর্নিহিত রয়েছে আত্মত্যাগ ও সহমর্মিতার গভীর বার্তা। এই ভাবনাই প্রতিফলিত হয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের চোখে।
এফটিএনএস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ধী-বুনিয়ানুম মারসুস বলেন, “ঈদুল আজহা কেবল উৎসব নয়, এটি হালাল উপার্জন, ন্যায্যতা ও দরিদ্রদের কল্যাণে কাজ করার শিক্ষা দেয়। কোরবানির মূল বার্তাই হলো ত্যাগ এবং সমাজে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন।” তিনি মনে করেন, ইসলাম শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মাধ্যমে একজন মানুষকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সুশৃঙ্খল হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়।
সিপিএস বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাবিয়া সুলতানা প্রীতি বলেন, “ঈদ আমাদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের ঈদের আমেজ, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি—এসব শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। তবে ঈদের প্রকৃত শিক্ষা যদি ধারণ করতে পারি, তাহলে সমাজে বৈষম্য অনেকটাই কমে আসবে।”
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল হাসান বলেন, “ঈদুল আজহা হলো মুসলিমদের জন্য একটি বড় আনন্দ ও উৎসবের দিন। এই দিনে আমরা অনেকেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন কিছু কোরবানি করে থাকি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ গরু, কেউ ভেড়া ইত্যাদি কোরবানি করে থাকেন। তবে আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যারা কোরবানি দেন শুধু মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়। আবার কেউ কেউ কোরবানি করেন লোক দেখানোর জন্য। কেউ যদি কোরবানি করে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, তাহলে নিঃসন্দেহে তার সেই কোরবানি বৃথা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “হাদিসের কিতাব জামে আত-তিরমিজি-এর ১৫৩৫ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই লোক দেখানোর মনোভাব শিরকের সমতুল্য।’ এছাড়া, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আনআম-এর ১৬২ নম্বর আয়াতে বলেন:
‘বল, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য নিবেদিত।’”
বিজিই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, “ঈদুল আজহা শুধুই একটি উৎসব নয়, এটি ত্যাগ, শিক্ষা এবং আত্মশুদ্ধির এক মহামিলন। ইসলামের মহান আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিসও কোরবানি করতে পিছপা হওয়া যায় না। এই শিক্ষা আমাদের কেবল পশু কোরবানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং জীবনের প্রতিটি স্তরে—নিজের স্বার্থ, সময়, অহংকার কিংবা অন্যায় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে কোরবানির বার্তা দেয়।
আজকের তরুণ প্রজন্মকে এই চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে—পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে ন্যায়, সহানুভূতি ও দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠায়। ঈদুল আজহার আসল সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন আমরা কোরবানির আত্মা নিয়ে আমাদের চারপাশের মানুষদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি, বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে মানবতার সেতুবন্ধন গড়ি। এই দিনে আমরা যেন ভুলে না যাই—ইসলাম আমাদের কেবল উৎসব করতে শেখায় না, আমাদের ভেতরের পশু স্বভাবকেও সংযত করতে বলে। তাই কোরবানির প্রকৃত অর্থ হোক আমাদের জীবনে আলোর দিশা।”
শিক্ষার্থীদের এসব অনুভব ও মতামত থেকে স্পষ্ট—ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মিক সংযোগ, মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি অনন্য শিক্ষা। তরুণ প্রজন্ম যদি এই মূল্যবোধ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সমাজে গড়ে উঠবে একটি ইতিবাচক, সহানুভূতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। ঈদের অন্তর্নিহিত শিক্ষা শুধু কোরবানির পশু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে যদি আমাদের আচার-আচরণ ও দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়, তবেই তা হবে প্রকৃত কোরবানির বাস্তব রূপায়ণ।