ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
নবীগঞ্জে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা: আতঙ্কে ১২টি পরিবার
কলাপাড়ায় জলবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ ১৬০ পরিবার পেল ত্রান সহায়তা
পঞ্চগড়ে কাগজিয়াপাড়া গোরস্থান থেকে ৫ টি কঙ্কাল চুরি
বাগমারায় আসামি ছিনিয়ে হত্যা,মামলার প্রধান আসামি আত্রাই থেকে গ্রেপ্তার
পিরোজপুরে ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন
দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষা করে সকলকে অগ্রসর হতে হবে-ড.ওবায়দুল ইসলাম
কুড়িগ্রামে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে ২ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি
জাতীয় প্রাথমিক পদক প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা হলেন কুড়িগ্রামের আব্দুল্লাহ রাদ বিন রাজু
সুন্দরবনে বনবিভাগের বিশেষ অভিযানে হরিণ ধরার ফাঁদ উদ্ধার
শেরপুরে কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শনে পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম
এনসিপি বোদা উপজেলা সমন্বয় কমিটি গঠিত
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন আফছার আলী
নাইক্ষ্যংছড়িতে চোরাকারবারির সাথে বিজিবির গোলাগুলিতে আহত-৪, হামলাকারী গ্রেফতার
চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ সভায় ডা. শাহাদাত হোসেন
লক্ষ্মীপুরে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে টুং টাং শব্দে মুখরিত সলঙ্গার কামারপট্টি

মোঃ আখতার হোসেন হিরন, সলঙ্গা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা বাজারের কামার শিল্পদের ব্যস্ততা। সারা বছর অলস সময় পার করলেও পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় ধারালো সরঞ্জাম দা, ছুরি, চাপাতি ও বঁটি তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কামাররা। একদিকে বেড়েছে কয়লা ও লোহার দাম অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিকের অভাব হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এ পেশায় জড়িত ব্যবসায়ীরা।

আজ সকালে সলঙ্গা বাজার কদমতলা এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, টুংটাং শব্দে মুখর কামার পট্টি। কয়লার চুলায় জ্বলছে আগুন। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরঙা লোহার খণ্ড। কেউ ভোঁতা হয়ে পড়া দা ও ছুরিতে শাণ দিচ্ছেন। কেউবা হাপর টানছেন। কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে মধ্য রাত পর্যন্ত এভাবেই নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন কারিগররা। তবে বাজারে চায়নার তৈরি ছুরি, চাপাতিতে সয়লাব হওয়ার কারনে কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে অনেক কামার শিল্পদের।

‎এদিকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর নতুন ছুরি-চাপাতি কেনার জন্যে দোকানগুলোতে যেমন ভিড় বাড়ে তেমনি পুরানো ছুরি-চাপাতি ধার দেবার জন্যেও কামারপট্টিতে ভিড় করেন লোকজন। বছরের এই সময়টাতে তাই দোকানগুলোতে পশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত নানা ধরনের ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি সাজিয়ে রাখেন দোকানিরা।

কামার পট্টির কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, ছুরি, চাকু ও বঁটির বেচাকেনা বেড়েছে। দামও সন্তোষজনক। বর্তমানে প্রতি পিস বটি ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, চাপাতি কেজি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, ছোট ছুরি সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে জবাই করার ছুরি ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লোহার ও কয়লার দাম বাড়ায় প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

সলঙ্গা বাজারের কামার শিল্প আব্দুস সামাদ বলেন, একসময় আমাদের এখানে অনেক দোকান থাকলেও তবে এখন কমতে কমতে আমাদের অল্প কয়েকটি দোকান আছে মাত্র । বাজারে চায়না জিনিসপত্র বেড়ে যাওয়ায় আগের মত এখন আর কাস্টোমার আসে না। শুধু কোরবানির সময়ই আমাদের কাজের চাপ বাড়ে তাছাড়া বারো মাস তেমন কোন কাজের চাপই থাকে না আরকি।

কামার শিল্প হাসেম আলী বলেন, মাত্র কয়েকদিন হলো কাজের চাপ বেড়েছে। আগে তো সারাদিন বসেই থাকতাম। কোরবানির আগ পর্যন্ত আমাদের চাহিদা থাকবে এরপর আর কাজের কোন খবর থাকে না। সারা বছরই আমাদের কষ্ট করে চলতে হয়। সরকার থেকেও কোন ধরনের সহযোগিতা আমরা পাই না। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। এক সিজনে ব্যবসা করে কি সারা বছর চলা যায়।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কামারপট্টির কারিগর আইয়ুব,রেজা অভিযোগ করে বলেন, পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শরীরে তৈরি হয়। সারাদিন কাজ করে মাত্র ৪শ,৫শ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না।

থানামোড়ের ক্রেতা মোঃ রমজান আলী,চড়িয়া মধ্যপাড়ার হোটেল ব্যবসায়ী হাফিজ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। বছরে একবার ক্রয় করতে হয় বলে একটু বেশি দাম দিয়েই ক্রয় করেছি। তবে চায়না প্রোডাক্টের তুলনায় এদের কাজ অনেক ভাল এবং টেকেও বেশি দিন তাই এখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করি।

সলঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সদস্য ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতির আফছার আলী জানান,সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সলঙ্গা অঞ্চলে কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন অনেকে। অনেকের প্রত্যাশা সরকারি পৃষ্ঠপেষকতা পেলে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, সলঙ্গা বাজার সহ অত্র এলাকায় প্রায় ২৫/৩০ টি পরিবার লৌহজাত দ্রব্য বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে আসছে। প্রবিণ এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে চাইলে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শেয়ার করুনঃ