
মোঃ তপু আহমেদ (নবীগঞ্জ -বাহুবল) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসংলগ্ন জনতার বাজারে পশুর হাট বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনার পরও আজ শনিবার হাট বসিয়েছে বাজার পরিচালনা কমিটি। এ সময় দায়িত্ব পালনকারী এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি এবং তাঁকে নাজেহাল করার অভিযোগ উঠেছে কমিটির লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক মো. ফরিদুর রহমান ৭ জানুয়ারি গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণের নির্দেশ দেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি হাটটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সর্বশেষ ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সারা দেশে মহাসড়কের পাশে পশুর হাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা জনতার বাজার এলাকা পরিদর্শনে যান। এ সময় বাজার কমিটিকে হাট না বসানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে কমিটি যেকোনো পরিস্থিতিতেই হাট বসানোর ঘোষণা দিয়ে অনড় অবস্থান নেয়।
হাট বন্ধে শনিবার সকাল থেকে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য নিয়ে মহাসড়ক ও বাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। কিন্তু সকাল থেকে হাটে গরুবোঝাই যানবাহন আসতে থাকে। এগুলোকে পানিউমদা, আইনগাঁও, কান্দিগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার গরুবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান আটকে দিলে বাজার কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তাঁকে মারতে তেড়ে আসেন। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটে মানুষের ভিড় ও পশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাট বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বল প্রয়োগের প্রস্তুতি থাকলেও বেলা ১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে এসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে ফিরে যায়। পরে বাজারে মানুষের ভিড় আরও বেড়ে গেলে প্রশাসন বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। অন্যদিকে হাটের জন্য মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, জনতার বাজারে হাট বসাতে প্রতিবার প্রত্যয়ন ফির নামে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। নির্দেশনা অমান্য করে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোট ১৮ বার বসেছে পশুর হাট।
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ‘জনতার বাজারে হাট না বসাতে বারবার নোটিশ, মাইকিং ও সরেজমিনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবকিছু অমান্য করে হাট বসানো হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’