
দবিরুল ইসলাম পাঁচবিবি ( জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ আগামী ৭ জুন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট। উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পাঁচবিবি গো-হাটা সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ হাটবাজার গুলোতে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা মাত্র কোরবানী পশুর বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। এসব হাটগুলোতে দেশীয় গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুর উপস্থিতিও বেশ লক্ষনীয়। একারণে কোরবানী ঈদকে উদ্দেশ্য করে লালন পালন কারী উপজেলার ক্ষুদ্র খামারীরা তাদের খামারের গরুর নায্য দাম নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন। গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলেও তারা লাভের আশায় বেশি দামে খাদ্য খাইয়ে গরু পালন করেছেন। কিন্তুু বাজারে ভারতীয় গরুর ও দেশিয় গরু বৃদ্ধির কারনে এবার পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ।
উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের সন্তা গ্রামের ক্ষুদ্র খামারী রাফি আহম্মেদ জানায়, প্রতিবছর কোরবানীর ঈদকে টার্গেট করে পারিবারিক ভাবে গরু লালন পালন করেন। এবার বিভিন্ন জাতের ২৩টি গরু পালন করেছেন। এবার বাজার খারাপ হওয়াই এখন পর্যন্ত কোন গরু বিক্রি করতে পারেননি। তার উপর বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় কাঙ্খিত দাম নিয়ে চিন্তায় আছেন।
তিনি জানান, গত বছর কোরবানী ঈদের জন্য ৪৫ টি গরু লালন পালন করেছিলেন। কিন্তুু বাজারে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াই এবং সে তুলনায় গরু বিক্রিতে লোকসান গুনতে হবে ভেবে এবার মাত্র ২৩ টি গরু লালন পালন করেছি ।
উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের জাম্বুবান গ্রামের খামারী আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি কাজের পাশাপাশি কোরবানীর বাজারকে টার্গেট করে প্রতি বছর বিদেশী জাতের গরু লালন-পালন করি। এবার গো-খাদ্যের দাম লাগামহীন বেড়েই চলছে । এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সে কারণে এবার ১৪ টি শাহীওয়াল ও অন্যান্য জাতের গরু পালন করছেন। ইতিমধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছেন। তেমন লাভ না হওয়াই এবার আর কোন গরু বিক্রি করবেন না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব মতে এবার উপজেলায় ৭৮ হাজার ৩১১ টি গবাদি পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুুত করেছেন ব্যক্তি উদ্যোক্তা সহ স্থানীয় খামারিরা। আর উপজেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা ১৯ হাজার টি। চাহিদার চেয়ে প্রস্তুুত রয়েছে আরো প্রায় ৫১ হাজারের বেশি পশু । উপজেলায় বাণিজ্যিক কোন খামার না থাকলেও ৮ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১ হাজার ৫৫৪ টি পারিবারিক খামারে এসব পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুুত করা হয়েছে। কোরবানি যোগ্য গবাদি পশুর মধ্যে ষাঁড় ৭ হাজার ৬৫২ টি, বলদ ৬৮৩ টি, বকনা ৮ হাজার ২৫টি, মহিষ ৩৪টি, ছাগল ৩৪ হাজার ২৯৮টি, ভেড়া ১১ হাজার ৬১৮ সহ মোট ৭৮হাজার ৩১১টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে ।
অপরদিকে এসব পশু বিক্রয়ের জন্য ১৭/১৮টি অনলাইন মাধ্যম ও সরকারী ভাবে পশুরহাট পাঁচবিবি জয়পুরহাট নামে একটি সরকারী ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে মূল্য সহ প্রতিদিন এসব পশুর ছবি সহ বিবরণ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আপলোড করা হচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ হাসান আলী বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে এ উপজেলায় বিভিন্ন খামারে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোরবানী যোগ্য পশু রয়েছে। খামারীরা তাদের পশুর ন্যায্য মূল্য যাতে পায় সে জন্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশে কেন্দ্রীয় ভাবে কড়া নজরদারী বাড়াতে ইতিমধ্যে বিজিবি ও পাঁচবিবি থানা পুলিশ কে অবহিত করা হয়েছে। জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কিছু অসাধু গরু পাচারকারীচক্র সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরুর চালান ঢোকানোর অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ অপতৎপরতা রোধে বিজিবি প্রস্তুত থেকে সীমান্তে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যাতে কোনো গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি আভিযানিক তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।