
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়া শহরের যে বাসা থেকে আটক গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেটি দেড় মাস আগে ভাড়া নেন পেছনের বাড়ির মালিক ইকবাল হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী মিনারা খাতুন। তাঁরা অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার কথা বলে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন উক্ত বাসা বাড়ির মেসের দায়িত্বে থাকা শাহীন নামের এক ছাত্র।
উল্লেখ্য, এই হেলাল উদ্দিন কে? তার পরিচয় কি? এই হেলাল উদ্দিনের ভাই রাশিদুল ইসলাম সাবেক ফ্যাসিষ্ট সরকারের কষ্টিয়া সদর ৩ আসনের এমপি হানিফের বাড়ী দেখভাল ও অতিথিদের চাঁ আপ্যায়ন সহ বাড়ীর সকলকে আপ্যায়ন করাতেন। হানিফ এমপি’র সুবাদে রাশিদুলের ক্ষমতার দাপটে দুবাইতে থাকা অবস্থায় গভীর সখ্যতা গড়ে তোলেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া সুব্রত বাইনের সাথে তার ভাই হেলাল উদ্দিনের। তবে সুব্রত বাইনের সাথে হেলাল উদ্দিনের দীর্ঘ বছরের সম্পর্ক ছিল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কারন হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। গত বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। দুবাই থাকা অবস্থায় সুব্রত বাইনের সাথে তার সম্পর্ক হয় বলে ধারনা করছে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তারই সূত্র ধরে কুষ্টিয়াতে তার অবস্থান ও ঘাটি। নতুন কোন নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই কি হেলালের হাত ধরে এই মাফিয়া অবস্থান করছিলেন, এ নিয়ে কুষ্টিয়াবাসীর মধ্যে ধুম্রজাল স্মৃষ্টি হয়েছে।
মেসের দায়িত্বে থাকা বাসিন্দা শাহীন বলেন, মালিকের কাছ থেকে পুরো বাড়িটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। দেড় মাস আগে পেছনের বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা খাতুন (হীরা) আসেন। তাঁরা নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া চান। তাঁরা বলেন, এখানে অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার জন্য পোশাক রাখা হবে এবং তাঁদের কিছু লোকজন থাকবেন। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন ছাত্ররা। এরপর হেলাল উদ্দিন এই ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। ক্যামেরার সংযোগ পেছনে তাঁর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ওই ছাত্র আরও বলেন, ভাড়া নেওয়ার কয়েক দিন পর এই বাসায় এক ব্যক্তি আসেন। খুব কম সময় বাসা থেকে বের হতেন। তবে তাঁর সঙ্গে কখনো মেসে থাকা ছাত্রদের কথা হতো না। তাঁর নাম পরিচয় কেউ জানতেন না। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এক নারীকে নিচতলার এই ফ্ল্যাটে দেখতে পান ছাত্ররা। ওই নারী কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন বলে ছাত্ররা জানান। তারা আরো জানান, ১০-১২ দিন ধরে এই ভবনের সামনে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াত। বেশ কিছু লোকের যাতায়াত তাঁরা লক্ষ করতেন। নিচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে সুব্রত বাইনকে আটক করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গত দেড় মাসে কোনো রকম খাবার রান্না হয়নি। সব খাবার বাইরে থেকে আনা হতো।
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে যে ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে, ঠিক সেই ভবনের পেছনেই মিনারা খাতুন ও হেলাল উদ্দিনের বাড়ি। মিনারা একটি পোশাকের দোকানের মালিক। তিনি মুঠোফোনে বলেন, তাঁর স্বামীর মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলেন, এই ঘটনায় আমরা ফেঁসে গেছি। মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিন ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। গত বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তাঁর স্বামী জমি কেনাবেচা ও ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা করেন বলে দাবি করেন। দেড় মাস আগে তাঁর স্বামী তাঁকে জানান, কয়েকজন ব্যক্তি এখানে থাকবে। এরপর ওই ব্যক্তিরা এই নিচতলাতে থাকতে শুরু করেন। তিনি আরো বলেন, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই, এমনকি তাঁদের আগে কখনো দেখেননি। স্বামী হেলাল উদ্দিন কোথায় জানতে চাইলে মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী গত ২৭ তারিখ রাতেই বাইরে গেছেন এখন পর্যন্ত তার খবর জানিনা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালিশংকরপুরের বাসিন্দারা জানান, এই হেলাল উদ্দিন বিদেশ থেকে আসার পর থেকেই শুরু করেছিল মাদকের ব্যবসা যেহেতু হানিফের ভ্যানগার্ড রাশিদুল তার ভাই। তবে ব্যবসাটা জোরেসোরে চাগান দিয়েছিল বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে। তবে এই হেলাল উদ্দিন ইতিমধ্যে আবার বিদেশ চলে গেল কিনা তা নিয়েও শংশয় সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে। এলাকাবাসীর দাবী একটাই যে, হেলাল উদ্দিন যেন দেশ থেকে না পালাতে পারে সে জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কারন কুষ্টিয়াতে নতুন করে নাশকতা তৈরীর মূল হোতা ছিলেন এই হেলাল, তাকে গ্রেফতার করলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।