
রাজশাহীর তানোরে অসহায় দরিদ্র পরিবার ও আদিবাসী নারীদের শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তানোর (চাপড়া) মহিলা ডিগ্রী কলেজ। মাত্র ১০ কেজি চাল ও ২শ’ ৫০ টাকা খরচ দিয়ে সারা মাস আবাসিকে ফ্রি থাকা ও খাওয়ার সুযোগ রয়েছে এই কলেজে। এর মধ্যে এতিম ও অতিদরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছে কোন খরচ নেয়া হয়না। আবাসিকে থেকে পড়ালিখা করা এসব অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়া লিখার সুযোগ করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ অনুকুর কুমার ঘোষ। ফলে, এতিম, অসহায় অতিদরিদ্র ও আদিবাসী নারীদের শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এই কলেজটি।
অধ্যক্ষ অনুকুল কুমার ঘোষ বলেন, কলেজের সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় কলেজ ক্যাম্পাসের আবাসিক হোষ্টেলে ২শ’ জন শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রীতে ৫শ’ ৮৭ জন এবং অনার্স এ ২শ’ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এই কলেজে। এর মধ্যে ২শ’ জন থেকে ১শ’ ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত ভাবে আবাসিক হোষ্টেলে থাকছে। এর মধ্যে ৬০ জন (আদিবাসী) খুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতি মাসে ১০ কেজি চাল ও ২শ’ ৫০ টাকা এবং বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১শ’ টাকা নেয়া হয়। এতিম ও হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের ফ্রি থাকা ও খাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোরে, গোদাগাড়ী উপজেলা ও নওগাঁর নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এতিম, অসহায় দরিদ্র ও খুদ্র নৃ-গোষ্টী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীর বেশীর ভাগ কলেজ ক্যাম্পাসের হোস্টেলে আবাসিক হোষ্টেলে থেকে পড়া লিখা করছেন। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার অপার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে, নারীদের শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তানোর চাপড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ। ১৯৯৪ সালে তানোর তালন্দ সড়কের ধারে চাপড়া গ্রাম নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি ক্যাম্পাসে ফাঁকা জায়গার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন স্ববজীর চাষ ও কলেজ ক্যাম্পাসের মাঝ খানের ছোট্ট পুকুরটি মাছ চাষ করা হয় আবাসিক শিক্ষার্থীদের খচর লাঘবের জন্য।
এলাকাবাসী বলছেন, এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময়ে নারীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে অভিভাবকদের তেমন কোন আগ্রহ ছিলোনা। ওই সময়ে নারীদের শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষেই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে শিক্ষার গুনগত মান ও সুন্দর পরিবেশ মন কাড়ার মত। তারা বলছেন, ফলাফলের দিক থেকেও তানোরের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে এই কলেজটি। কলেজ ক্যাম্পাসের হোষ্টেলে স্বল্প খরচ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করায় দুর দুরান্তের এতিম অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশা পাশি খুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী( সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে। যা দেশের মধ্যে এক বিরল ঘটনা।
কলেজ ক্যাম্পাসের আবাসিক হোষ্টেলে থেকে পড়া লিখা করা কয়েকজন বলেন, স্বল্প খরচে পড়া লিখার সুযোগ না পেলে হয়তোবা তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারতেন না। তারা বলেন, থাকা ফ্রি, খাওয়ার জন্য মাসে ১০ কেজি চাল ও ২শ’ ৫০ টাকা লাগে এবং বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১শ’ টাকা লাগে। তারা বলেন, সপ্তাহে ৩দিন মাছ ও স্ববজী অন্য ২ দিন মাংস ও স্ববজী ডাল। খাবার মান যথেষ্ট ভালো। তারা বলেন, অধ্যক্ষ অনুকুল কুমার ঘোষ স্যার আমাদের স্বল্প খরচে থাকা ও খাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার কারনে আমরা দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থীরা বলেন, তানোর চাপড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ আমাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য সৃষ্টি কর্তার এক আশির্বাদ বলেও জানান তারা।