
হামিদুল হক মন্ডল গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন (PEDP4) প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড় ধরনের মেরামতের জন্য ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত এই প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব পায় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজের কাজ পায় গোবিন্দগঞ্জের তরফদার ট্রেডার্স, আর একটি প্যাকেজের কাজ পায় গাইবান্ধার এস এম ট্রেডার্স।
১নং প্যাকেজে খামার মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা,বিরামের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা,জামালপুর ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ লাখ টাকা।
২নং প্যাকেজে পবনাপুর,পার আমলাগাছী ও গোয়ালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭লাখ
টাকা করে মোট ২১ লাখ টাকা।
৩নং প্যাকেজে মহেশপুর, বরিশাল ও পলাশবাড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ লাখ টাকা করে মোট ২১ লাখ টাকা বরাদ্দক দেয়া হয়।
সম্প্রতি মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমানের কাজের অভিযোগে এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান দোলন এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সাংবাদিক মো. ফেরদাউছ মিয়া কাজ পরিদর্শন করেন। কাজের মান সন্তোষজনক না হওয়ায় উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হেলালুর রহমান হেলাল-কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়েছে, কোনো অনিয়ম হয়নি।”
অন্যদিকে, মেরামত কাজের গুণগত মান ও অগ্রগতি নিয়ে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের, অনেক বিদ্যালয়ে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদার চলে গেছেন, আর তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিরামের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাদিম মাহমুদ বলেন, “৩-৪ মাস আগে উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলাল ঠিকাদারসহ এসে কিছু টিন বদল করে গেছেন। এরপর থেকে কোনো খবর নেই। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।”
জামালপুর ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর আহমেদ বলেন, “রমজানের সময় কিছু ছাদের কাজ করে ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছে। এরপর থেকে কোনো কাজ হয়নি। শিক্ষার্থীরা খুব কষ্ট করছে।”
পার আমলাগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান, “প্রায় এক মাস আগে কিছু জলছাদ ও প্লাস্টারের কাজ করে দিয়ে ঠিকাদার চলে গেছে। তারপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি নেই। পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।”
গোয়ালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কার্তিক সাহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঠিকাদারের মিস্ত্রিরা কিছু প্লাস্টার করে ঘর নোংরা করে রেখে গেছে। এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস নেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”
শিক্ষকদের অভিযোগ, একদিকে ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হেলালুর রহমান হেলাল ফোন ধরছেন না। তারা বলেন, “৭ লাখ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও কাজের মান দেখে মনে হচ্ছে অর্ধেকও হবে না।”
উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলালের বিরুদ্ধে কাজের অগ্রগতি ও মান তদারকির ক্ষেত্রে অবহেলা, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, অভিযোগের প্রতি উদাসীনতা, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ এবং ‘প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়েছে’ বলে দায় এড়ানোর অভিযোগ উঠেছে, যা তদন্তের দাবি রাখে।
এ বিষয়ে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, “উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা প্রকৌশলী তপন চক্রবর্তী জানান, “বর্ষা মৌসুমের কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমি ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলাল বলেন, অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এখন পর্যন্ত ৩০-৪০% কাজ হয়েছে। ৩০শে জুনের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।”
বেতকাপা ইউনিয়ন ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম মেরামতের কাজ বন্ধ রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন।স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।