
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫৮তম বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণে আওয়ামী লীগ নেতাদের অতিথি করা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোহরা বেগম পিপি অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মুজিব বাহিনী রাজাপুর শাখার প্রধান মো. নূর হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মো. আমির খসরু বাবুলকে। অথচ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
উক্ত দুই আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে পুরস্কার বিতরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়ভাবে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, বিদ্যালয়ের মতো একটি নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা অনৈতিক। তারা প্রশ্ন তুলছেন, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন প্রধান শিক্ষক নিজে। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, রাজনৈতিক আনুগত্য থেকেই হয়তো এ সিদ্ধান্ত। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক জোহরা বেগম বলেন, “আমাদের স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন তারা। সেই সুবাদেই আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের দাওয়াত দিয়েছি। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নয়। আমি নিজেও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই।”
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা আলম জানান, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের এ অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছুই জানায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ইতোমধ্যে শুনেছি ঘটনাটি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত। প্রাক্তন শিক্ষক হলেও একজন সক্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে অন্যদের বাদ দিয়ে অতিথি করা প্রধান শিক্ষকের কাজটা ঠিক হয়নি। বিশেষ করে জুলাই মাসের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো দলের নেতাকে এককভাবে মঞ্চে জায়গা দেওয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন অনেকে।
এ ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে চুপ থাকলেও কেউ কেউ মনে করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত রাখাই শ্রেয়। এমন ঘটনায় ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
ক্যাপশনঃ বিজয়ী শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মো. আমির খসরু বাবুল।