
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: পাহাড়ী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)- এর গেরিলা যোদ্ধাদের ইউনিফর্ম তৈরী হচ্ছিল চট্টগ্রাম নগরীর একটি পোশাক শিল্প কারখানায়। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন নয়ারহাট এলাকার একটি পোশাক কারখানা থেকে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ২০ হাজার ৩০০ পিস পোশাক (ইউনিফর্ম) উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় পোশাক কারখানার মালিক শাহেদুল ইসলাম সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার (১৭ মে) নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে পোশাকগুলো জব্দ করা হয়। তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন প্রশাসনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ১৮ মে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মং হ্ল্যা সিন মারমা (৩৭) নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন কেএনএফের সদস্যরা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র অবস্থান করে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে।
গ্রেপ্তার ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে অবৈধভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।’ মামলা সূত্রে আরো জানা যায়, গত মার্চ মাসে পোশাকগুলো কারখানাটিতে অর্ডার দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার নামে জনৈক দুজন ব্যক্তি। তারা মং হ্ল্যা সিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরির অর্ডার নেন বলে জানা যায়। মং হ্ল্যা সিন’কে কেএনএফ সদস্যরা তাদের কাপড়ও দিয়ে যান বলে জানা গেছে। চলতি মাসে পোশাকগুলো সরবরাহ করার কথা ছিল। অর্ডারের প্রায় সিংহভাগ ইউনিফর্ম প্রস্তুত হয়েছিল বলেও জানা যায়। তবে ঠিক কি পরিমান ইউনিফর্ম তৈরীর অর্ডার দেওয়া হয়েছিল এবং যারা অর্ডার কনফার্ম করেছিল তাদের বিস্তারিতও এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এক প্রকার চাঞ্চল্য সৃষ্ঠি হয়েছে। দেশের স্বাধিনতা সার্ভভৌমত্বের জন্য হুমকি মনে করা হয় পাহাড়ী এই সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন ‘কেএনএফ’কে। আর সেই গেরিলা সংগঠনটির গেরিলা যোদ্ধাদের ইউনিফর্ম তৈরী হচ্ছিল নগরীর একটি পোশাক শিল্প কারখানায়।রিংভো অ্যাপারেলসের উৎপাদন ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান রবিবার (২৫ মে) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কাপড়গুলো যে অবৈধ, তা আমরা জানতাম না। পুলিশ আসার পর জানতে পারি।’পাহাড়ে খুনোখুনি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে বারবার আলোচনায় এসেছে কেএনএফ। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি এই সংগঠন গড়ে তোলেন বলে জানা যায়। বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল অঞ্চলেই মুলত বমদের বসবাস। পাহাড়ের সংগঠন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও কেএনএফ সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলিতে এই পর্যন্ত অনেকের প্রানহানী হয়েছে। পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কেএনএফ’র সাথে অন্যান্য সশস্ত্র সংঘাতের খবর প্রায় শুনা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিঘ্ন সৃষ্ঠিকারী ভাবা হয় কেএনএফ’কে।