
হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার দেখাতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ভাগ্নে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বারকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়েছে। বুধবার (২১ মে) কলম মেম্বারকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে আদালত আগামী ২৫মে তার গ্রেফতার শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
খিলগাঁওয়ে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহার নামীয় ১৪৪ নম্বর আসামি কলম মেম্বার। গত ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও থানায় মামলাটি হয়। এছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর কারাগারে থাকা ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বারকে আজ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
খিলগাঁও থানায় হওয়া মামলার নথি আদালতে উপস্থাপন না করায় আদালত আগামী ২৫মে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন। ওইদিন কলম মেম্বারকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখাতে শুনানির দিন ধার্য আছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের সদস্য ছিল এই ইব্রাহিম শেখকে হত ২০ এপ্রিল ফরিদপুর শহরের আদালতপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতবছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় হওয়া দ্রুত বিচার আইনের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি এই কলম মেম্বার। ওই মামলা তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
তাছাড়া গত ১৩ আগস্ট আলফাডাঙ্গা থানায় বিস্ফোরক ও নাশকতার একটি মামলায় কলম মেম্বার এজাহারনামীয় আসামি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৩ আগস্ট আলফাডাঙ্গা উপজেলার আরিফুজ্জামান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন চৌরাস্তায় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মিছিল করে। ওই মিছিল থেকে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় শতশত ককটেল ও হাত বোমা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। এই ঘটনায় বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগ এনে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলার আসামি এই কলম মেম্বার। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে এরইমধ্যে আদালত আদেশ দিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা পুলিশের নথি বলছে— সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাশিয়ার ও ভাগ্নে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কলম মেম্বার বিরোধী মত দমনে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলো। তার মাধ্যমে স্থানীয় বিএনপি-জায়ামাতের নেতা-কর্মীরা বারবার নির্যাতিত হয়েছে।
জানা গেছে, কলম মেম্বারের বাড়ি আলফাডাঙ্গার কামারগ্রামে। সে ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ভাগ্নে ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য। মামা আছাদুজ্জামান মিয়ার প্রভাব কাজে লাগিয়ে হন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের নেতা। এই কলম মেম্বার আছাদুজ্জামান মিয়ার ভাগ্নে পরিচয়ে ও মামার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় জমি দখল, সালিশের নামে টাকা আদায়, চাঁদাবাজিসহ পুলিশে চাকরি, বদলি বাণিজ্য করে টাকা কামিয়েছেন দু’হাতে। এমনকি আছাদুজ্জামান মিয়া তাকে ভোট কারচুপির মাধ্যমে স্থানীয় আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে কলম মেম্বারকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল।
সূত্র বলছে, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ভাগ্নে হওয়ার সুবাদে অনেক সম্পদ ও টাকার মালিক হয়েছেন এই কলম মেম্বার। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া মৌজায় ইব্রাহিম শেখ কলমের নামে ১৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার বাজারমূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। তবে এই জমির প্রকৃত মালিক সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এছাড়া ‘সবুজ ছায়া’ নামে ইব্রাহীম শেখ একটি ঋণদান সংস্থার মালিক। যেখানে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে তার। এ প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া সুদে ঋণ দেওয়া হয় মানুষকে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ অর্থেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডিআই/এসকে