
বিদেশ পাঠিয়ে বৈধ কাগজ পেতে দেরি হওয়ায় মোবাইল চোর আখ্যা দিয়ে মতিউর রহমান (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
রোববার (১৮ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর স্টেশনে বগুড়া থেকে সান্তাহার অভিমুখী একটি কমিউটার ট্রেনে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে চলছে দেশজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনা।
মতিউর রহমানের বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে অনেকেই মতিউরকে চোর এবং ছিনতাইকারী বলে দাবি করছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মতিউরের পরিবারের সদস্যরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মতিউর পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। গত দুই বছর থেকে দূতাবাস এবং এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। গত ১৫ দিন আগে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবে যেয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা ৭-৮ দিন আগে মতিউরের বাড়িতে যেয়ে কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চান। এ নিয়ে একটি ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তারই যের ধরে বগুড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা মিলে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেন। পরে তার কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ মতিউরের পরিবারের।
মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, আমার বাবা পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। গত দেঁড় বছর থেকে সৌদি আরবের অ্যাম্বাসির মাধ্যমে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ৩-৪ জনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। তারা সেদেশে ভালোই আছে। গত ১৫ দিন আগে আমার বাবা বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার তালশন গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজিব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবে পাঠানো বাবদ তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে যেয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজিব তার বাবাকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে গত ৭-৮ দিন আগে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে যায়। এরই যের ধরে বগুড়া থেকে ট্রেনে বাড়িতে ফেরার পথে সজিবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা আমার বাবাকে মোবাইল চোর বলে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে এবং প্রায় ৪-৫ মিনিট ট্রেনের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। সেসময় বাবার কাছে ব্যবসায়িক কাজের ৫০ হাজার টাকা ছিল। সেটিও তারা কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে ট্রেনটি আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর স্টেশনে আসলে সেখানকার প্লাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আমার বাবা ট্রেনের নিচে পড়ে যায়। ট্রেনের নিচে পড়লেও বাবা কোনোরকম প্রাণে বেচে যান। কিন্তু সেখানকার উৎসুক জনতা বাবাকে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী ভেবে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন।