
২০০৬ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর ফলে স্থানীয়দের মাঝে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল তা ধূলিসাৎ হতে সময় লাগেনি। কেননা শয্যা সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ৫০ শয্যার প্রয়োজনীয় জনবল। জনবল না থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
আউটডোর ও ইনডোরে উভয়ক্ষেত্রেই সেবাপ্রত্যাশী অসংখ্য নারী পুরুষ ও শিশুরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের ক্ষেত্রেও বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী প্রকৃত সেবা পাচ্ছে না। শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় খুব জটিল রোগীদেরকে প্রায় সময়ই রেফার করতে দেখা যায়।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে ৩ লক্ষাধিক জনসংখ্যায় এ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালের বর্হি বিভাগ ও অভ্যন্তরিন বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। গত ৪ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী ছাড়াও তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদগুলোও ফাকা রয়েছে।
জানা গেছে, বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে মোট ৩০ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইউনিয়ন থেকে পদায়িত হয়ে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এই হাসপাতালে গাইনি, কার্ডিওলোজি, মেডিসিন, শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক কান গলা, অ্যানেস্থেসিয়া ও অর্থোপেডিক জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের ১০টি পদ থাকলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১ জন চিকিৎসকও নেই। যদিও হাড়জোর বিশেষজ্ঞ পদে ১ জন চিকিৎসক কাগজে কলমে এই হাসপাতালে যোগদান করলেও তিনি কোন দিন এখানে আসেন নি। খোজ নিয়ে জানা গেছে তিনি পেশনে ময়মনসিংহে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে ৩ জন চিকিৎসক বিনা অনুমতিতে এখনো কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ শত জন রোগী বর্হি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। ৫০ শয্যা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন আগে এই হাসপাতালটিতে জোতগুলো চিকিৎসক প্রয়োজন ততো গুলো চিকিৎসক ছিল। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকগণ প্রশিক্ষণ গ্রহন ও পেশন নিয়ে এবং বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটিতে চিকিৎসকের সংকট প্রকোট আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসক না থাকায় চিকিসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার মানুষ। এছাড়াও ২টি স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছেন ১ জন, ৭ টি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে মাত্র ১ জন কর্মরত রয়েছেন। ৩৫ টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের মধ্যে ২৩ জন কর্মরত রয়েছেন। এই হাসপাতালে আউটর্সোসিংয়ে কেউ কর্মরত নেই। এমএলএসএস এর ৪ টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১ জন।
জানা যায়, এই হাপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকায় বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুল কবির প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিজেই বহির বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও গভীর রাত পর্যন্ত রোগীদের শয্যায় শয্যায় গিয়ে চিকিৎসা সেবক এবং ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন বলে রোগীরা জানান।
এদিকে উপজেলার সরকার পাড়া থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কল্পনা আক্তার জানান- নামেই হাসপাতাল, সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায় না, আগে যে ঔষধ হাসপাতালে পাইতাম এখন বাহির থেকে আনতে হয়। এভাবেই বিরূপ মন্তব্য করেন আগত সেবাপ্রত্যাশী শুরুজ মিয়া, ফারুক মিয়া ও দিলরুবা বেগম সহ আরো অনেক।
এ বিষয়ে ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া মেডিকেল অফিসার ডাক্তার জাহিদ হাসান বলেন, দিনরাত ডিউটি করতে হয়। হাসপাতালটি মহাসড়কের পাশে থাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার আংশিক ও আটোয়ারী উপজেলার আংশিক রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তাছাড়া মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার হলে সকল রুগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। বর্তমানে ৪ জন ডাক্তার দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুল কবির জানান, সীমিত জনবল দিয়েই আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্বক চেষ্টা করছি। তিনি আরও জানান, চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাবও রয়েছে।