
সাইদ সাজু, তানোর থেকেঃ রাজশাহীর তানোরে শিবনদীর কচুরী পানার নিচ থেকে প্রেমিকের বস্তা বন্দী গলীত লাশ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় প্রেমিকাসহ ৬ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত প্রেমিকের পিতা হাবিবনগর পাল পাড়ার মনোরঞ্জন পাল। শনিবার তিনি বাদি হয়ে তানোর থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে তিনি তার পুত্র প্রেমিক চিত্তরঞ্জন পাল (২৬) নিখোঁজের পরদিনই গত ২৭ এপ্রিল তানোর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছিলেন।
রোববার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক প্রেমিকার পিতা একই গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল (৫৮), তাঁর স্ত্রী ছবি রানী (৫০) ও প্রেমিকার চাচাতো ভাবি কাজলী রানী পাল (৩০) কে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ স্কটের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করেন। আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মামলার অন্য ৩ আসামি স্বপনের প্রেমিকার ভাই সুবোদ পাল (৩০), প্রেমিকা কুমারী কামনা পাল (২৩) এবং জেলার মোহনপুর উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের মোহাম্মাদ রাজু (৪৫) প্রেমিক নিখোঁজের পর থেকেই পলাতক রয়েছে।
মামলার বিবরন, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকার হাবিবনগর পাল পাড়া মহল্লার মনোরঞ্জন পালের পুত্র অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র চিত্তরঞ্জন পাল (২৬) এর সাথে একই মহল্লার স্বপন পালের কন্যা কলেজ ছাত্রী কামনা পাল (২৩) এর প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে মনোরঞ্জন তাঁর ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্বপন পালের বাড়ি যান। তাঁরা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। কামনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে চিত্তরঞ্জনকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক চলতেই থাকে। কামনা নিয়মিত চিঠিও লিখতেন।
গত ২৬ এপ্রিল রাতের খাবার পেয়ে মনোরঞ্জনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত ৪ টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোরঞ্জনের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তিনি দেখেন, চিত্তরঞ্জনের ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে কেউ নেই। তার পর থেকে চিত্তরঞ্জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল থেকে কামনা ও তাঁর ভাই সুবোদকেও এলাকায় দেখা যায়নি। চিত্তরঞ্জন ছেলের ব্যাপারে স্বপন চন্দ্র পালের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। স্বপন তাঁকে এলোমেলো জবাব দেন এবং ধমক দেন। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মনোরঞ্জন তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
গত ১৭ মে শনিবার সকালে প্রেমিকের বাড়ির পূর্ব পাশ্বের শিবনদীতে কচুরী পানার নিচ থেকে মাথা আলাদা করা বস্তা বন্দী গলীত লাশ উদ্ধার করা হয়। তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আফজাল হোসেন বলেন, লাশের হাড়গোড় উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় তানোর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আটক ৩ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।