মোঃ নূরবক্ত মিঞা, স্টাফ রিপোর্টারঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের পাশাপাশি ব্যাপক পরিমাণে বাদাম চাষ করছেন এখানকার কৃষকরা। ফলনও হয়েছে বাম্পার, তবে কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে বোরো ধান ঘরে তোলেন কিন্তু পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে বাদাম ক্ষেত। তাই বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকিতে কৃষকেরা।উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় এ মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি অর্জিত হয়েছে। অনেক চর জেগে ওঠা বালুমাটিতে বাদাম চাষে এ অঞ্চলের মানুষজন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ফসলের প্রকারভেদ অনুযায়ী বালুর বুক চিরে চাষ করেছেন বাদাম।এ অঞ্চলের বোরো-চাষীরা জানান, ধানের বাম্পার ফলন হলেও ভারী বর্ষনের কারণে মজুর সংকট ও কাটা-মাড়াইয়ে ব্যাপক দূর্ভোগে পরেছেন তারা। ধান শুকাতে না পারায় কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। বাদাম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বালুমাটি মূলত বাদাম চাষের উপযোগী। এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষে সব মিলে ব্যয় হয় ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমিতে বাদাম উৎপাদন হবে ১০ থেকে ১২ মণ। বাদাম জমিতে বপন করার পর থেকে পরিপক্ক হতে প্রায় চার মাস সময় লাগে। এ পরিস্থিতিতে, হঠাৎ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির পানিতে বাদাম ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় এ উপজেলার তিস্তা নদী অববাহিকার থেতরাই, গুনাইগাছ ও বজরা ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে বাদাম চাষাবাদ করা প্রায় শতাধিক কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
সরেজমিনে শনিবার (১৭ মে) বিকেলে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চল কিশোরপুরে গিয়ে দেখা যায়, বাদাম ক্ষেতগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে বাদামের গাছগুলো পচে মরে যাচ্ছে।
এসময় বাদামচাষি আবু মুসার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ঘন বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাদামের ফসলি জমি ডুবে যায়। আর মাত্র দশদিন পর বাদাম পরিপক্ব হতো। চাষাবাদ করতে যে টাকা খরচ হয়েছে, এখন সে টাকাও আর উঠবে না। একই চরে বাদাম চাষ করা কৃষক আতিকুর রহমান জানান, প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ১১৫ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল, পানিতে ডুবে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে। একই পরিস্থিতি উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের তিস্তার চরে চাষাবাদ করা বাদাম ক্ষেতগুলোও।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, বাদাম চাষিদের পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে বাদাম সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হবে। সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা আসলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের দেয়া হবে।