
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক টার্নিং পয়েন্ট। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটে। তবে সরকারের পতনের পরও রয়ে যায় বহু দোসর, যারা নানা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বসেই দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় বধির সংস্থা তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রিপন-মনোয়ার চক্রের নেতৃত্বে দুর্নীতির এক ভয়াবহ বলয় সক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় বধির সংস্থা বাংলাদেশের বধির ও বাকপ্রতিবন্ধী জনগণের একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন, যার উদ্দেশ্য সহায়তা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন। অথচ এই সংস্থাটি ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিণত হয় একটি অপরাধ-আশ্রয়ী ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সংস্থার সেক্রেটারি পদটি শুধুমাত্র একজন বধির সদস্যের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু শ্রবণক্ষম ব্যক্তি রিপন নিয়ম ভঙ্গ করে এই পদে চার বছর থেকে যান এবং নিজের নেতৃত্বে এক অপরাধচক্র গড়ে তোলেন।
এই সময়ের মধ্যে রিপন আড্ডা, দোকান বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা ও অপরাধ জগতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে ছিলেন আদনান, রানা, আলাল (তৈমুর আলম খন্দকারের আত্মীয়), মাসুমসহ আরও অনেকে। এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক পাচার, চাঁদাবাজি এবং মাদক সরবরাহে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারু চৌধুরী একাধিকবার থানায় অভিযোগ দিলেও, তৎকালীন সরকারের আশীর্বাদে সেই সময় কোনো কার্যকর তদন্ত শুরু হয়নি। বরং এই অপরাধচক্র আরও সংগঠিত হয়ে ওঠে।
এই চক্রের অন্যতম চালক ছিলেন মনোয়ার হোসেন। বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে সংস্থার এক আয়ার মেয়েকে বিয়ে করে তিনি সংস্থার অভ্যন্তরে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেন। এরপর তিনি ক্ষমতাশালী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে থাকেন।
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের আড়ালে তিনি নিয়মিতভাবে মাদক সরবরাহের কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে মনোয়ার ফ্ল্যাট, ব্যাংক ব্যালেন্স এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের মালিক হয়ে ওঠেন। জানা গেছে, মনোয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল-কে ব্যবহার করে তার স্ত্রীকে এনএসআইতে চাকরি পাইয়ে দেন এবং নিজেও বিটিভিতে দোভাষীর পদে নিয়োজিত হন। এরপর বিটিভির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তুলে চাঁদাবাজি শুরু করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটলেও রিপন-মনোয়ার চক্রের পতন হয়নি। তারা আজও সংস্থার অভ্যন্তরে সক্রিয় রয়েছে। মনোয়ার বর্তমানে সংস্থার বর্তমান নেতৃত্বকে অপদস্থ করতে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে জানা গেছে।
আজ বধির সমাজে বারবার একটি প্রশ্ন উঠে আসছে—
❝ যারা বছরের পর বছর অসহায় বাকপ্রতিবন্ধীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের বিচার কি আদৌ হবে? ❞
❝ নাকি তারা আবারও অন্ধকার ছায়ার নিচে থেকে যাবে—ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? ❞
মানবাধিকার সংস্থা ও সচেতন নাগরিকেরা নিরপেক্ষ তদন্ত, অপরাধীদের বিচার এবং সংস্থাকে রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে।