
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুন্সি শামসুল আলম দাদনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন একই উপজেলার বিএনপির এক নেতা। এসব অভিযোগ সংবলিত একটি লিখিত আবেদন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রেরণ করেছেন নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য মো.ফেরদৌস মুন্সী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুন্সি শামসুল আলম দাদন নড়িয়া-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের আপন মামাতো ভাই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন ও এখনও রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি গত ৯ মে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। এ ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও অভিযোগ পত্রে বলা হয়, তিনি নড়িয়ার সুরেশ্বর ঘাটে অস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ১২টি মাছের আড়ত জোরপূর্বক বন্ধ করে দেন এবং পরবর্তীতে ২৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে খুলে দেন। একইভাবে, ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট থেকে তিনি বিএনপির কিছু সুবিধাভোগী সদস্যদের নিয়ে পদ্মা নদীতে ২০ থেকে ২৫টি অবৈধ ড্রেজার (কাটার) ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে প্রশাসন দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির নির্দেশে বন্ধ করে দেন।
অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা বিএনপির চেয়াপার্সন ও তারেক রহমানের আদর্শের সঙ্গেও সঙ্ঘাতপূর্ণ। ছাত্র হত্যা মামলার আসামী নওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মুন্সী, চরআত্রা ই্উনিয়নের সাবেক আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে সামসুল আলম দাদন মুন্সী মানববন্ধন করেছেন। যাদের তিনি পাশে রাখেন তারা সবাই আওয়ামীলীগের লোক। জাকির হোসেন মুন্সী ও ফয়জুল হাসান বাদল মুন্সীর বিরুদ্ধে মব জাস্টিসের সাথে যুক্ত থাকায় নড়িয়া থানায় মামলা চলমান।
লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নড়িয়ার নওপাড়া ইউনিয়নে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপর প্রায় ২০০০ কানি সরকারি খাস জমির বড় একটি অংশ তিনি জোরপূর্বক দখল করেন। অসহায় মানুষের জমিজমা ও সামাজিক সমস্যার সালিশ দরবারের নামে তিনি অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় নওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বিভিন্ন মানুষের জমি জোড় পৃর্বক দখল করে নিয়েছেন সরকারি ঘাস জমি নামে বেনানামে রেকর্ড করিয়ে নেয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, তিনি নওপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট বাজার ও খেয়া ঘাট জোরপূর্বক দখল করে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করেন। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লিখিত সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এসব তথ্য উপস্থাপন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. ফেরদৌস মুন্সী।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল দাদন মুন্সি বলেন, শুনেছি ফেরদৌস মুন্সি আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছে। তবে সে কি কারণে কি জন্য করেছে তা আমার জানা নাই। ফেরদৌস মুন্সী সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই, সেই অনুযায়ী ফেরদৌস মুন্সিও সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের মামাতো ভাই। ফেরদৌস মুন্সি বিগত দিনে আওয়ামী লীগ করেছে এবং এনামুল হক শামীমের ভোট চেয়েছে। যদিও সে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য। সে এখন আবার নওপাড়া ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি হতে চায়।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর বলেন, সুরেশ্বর মাছ ঘাট, পদ্মার বালু নওপাড়ার আলু সরকারি খাস জমি দখলসহ সব অভিযোগই সত্য তবে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, না হলে চরআত্রা নওপাড়া দু’টি ইউনিয়নে বিএনপি বলতে কিছুই থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, আমি নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম দাদন মুন্সির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু অভিযোগ দেখেছি। কিন্তু কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ যদি দাদন মুন্সিসহ শরীয়তপুর জেলা বিএনপির কোনো নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অভিযোগ প্রমাণসহ দিতে পারে আমি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।