
মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের ১০৩ নং এস ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক থাকলেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত মাত্র একজন শিক্ষক। তিনিই একাই একটি শ্রেণিকক্ষে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির ১ জন, চতুর্থ শ্রেণির ৫ জন এবং পঞ্চম শ্রেণির ৪ জন শিক্ষার্থী। একাই দায়িত্ব পালন করছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ওরফে দুলাল।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রেজাউল করিম প্রশিক্ষণে, শারমিন আক্তার ডেপুটেশনে, আবুল বাশার তালুকদার ও দিতী বেপারী ছুটিতে রয়েছেন। তবে তাদের ছুটির তথ্য হাজিরা খাতায় উল্লেখ নেই। অপর শিক্ষক খলিলুর রহমান বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পরে চলে আসেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, বিদ্যালয়টি কার্যত শিক্ষার পরিবেশ থেকে অনেক দূরে। নামমাত্র শিক্ষার্থী থাকলেও উপবৃত্তি ও কাগজে-কলমে শতভাগ উপস্থিত দেখানো হয়। তবে নিয়মিত হাতে গোনা ৫ থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে। এটাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে মনে হয় না কারন এখানে শিক্ষক আছে তবে তেমন কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রতিদিন শিক্ষকরা সকালে স্কুলে এসে হাজির দেয় এরপর ছুটির সময় শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে চলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, অডিটের সময় পার্শ্ববর্তী নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।
বিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুপুর ১টা বাজে চলে আসেন সহকারী শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান। দুপুর ১টায় বিদ্যালয়ে আসার কথা জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, স্ত্রী অসুস্থ থাকায় প্রধন শিক্ষককে মুঠোফোনে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ওরফে দুলাল বলেন, “বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, এর মধ্যে ২২ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষক সংকট রয়েছে, একজন প্রশিক্ষণে, একজন ডেপুটেশনে, দুজন ছুটিতে ও একজনের স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় দেরিতে এসেছেন।” তিন দিন ধরে নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না থাকায় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ভুল হয়েছে, পরে ঠিক করে নিবো।”এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকতার হোসেন বলেন, ওই বিদ্যালে ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরকম উপজেলায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে বললে নেওয়া হবে। ৬ জন শিক্ষকদের মধ্যে কেন ১জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন এর জন্য প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।
এমন দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মে প্রশ্ন উঠেছে প্রাথমিক শিক্ষার মান এবং বিদ্যালয় পরিচালনায় তদারকির অভাব নিয়ে।