
অনলাইন জুয়া ওয়ান এক্স বেটের মাধ্যমে প্রতিমাসে গড়ে ২৫-৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এই টাকার সিংহভাগ দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। ওয়ান এক্স বেটসহ বাংলাদেশে প্রচলিত যতগুলো বেটিং সাইট রয়েছে তার বেশিরভাগই মূলত রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। ওয়ান এক্স বেট জুয়া সাইটের অন্যতম একজন বাংলাদেশী এজেন্ট হচ্ছে বরিশালের তারেক রহমান ওরফে তুহিন নামীয় এক ব্যক্তি। এ চক্রের আরো সদস্য রয়েছে।
অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ওয়ান এক্স বেটের ম্যানেজারসহ ৭ জনকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- সাইফ বিন ওহিদুল ওরফে বিপু (৩০), মো. জামিল হোসেন (৪২), মো. রাসেল শেখ (২৩), মো. সাব্বির হোসেন (২২), মো. সোহাগ হোসেন (২৪), মাইনুদ্দিউদ্দিন শিকদার ওরফে ছোটন (২৫) ও মো. ইমন হোসেন (২৩)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন ও ৯টি এজেন্ট সিমসহ মোট ২২ টি সিম উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার ( ৫ ডিসেম্বর ) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডি গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আজাদ রহমান।
তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া খেলার জন্য আলাদা আলাদা বেটিং সাইট বা ওয়েবসাইট রয়েছে। এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে প্রথমেই একজন ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশনের পরে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অঙ্কের একটি ব্যালেন্স যোগ করতে হয়। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠালে ব্যালেন্স যোগ হয়ে যায়। ব্যালেন্স যুক্ত হওয়ার পরে সাইটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার যে অপশন রয়েছে সেগুলো থেকে যেকোনো একটি পছন্দ অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট হোল্ডার খেলতে পারেন। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তি জিতলে অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স জমা হবে। আর হেরে গেলে টাকা চলে যায় জুয়ার সাইট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছে। যেমন- ক ও খ দুইটি ক্রিকেট টিমের খেলা চলাকালীন সময়ে অনলাইন জুয়ার সাইটে অফার দেয়া হলো যে, ক টিম যদি খেলায় জিতে যায় তাহলে জুয়াড়িরা পাবে ২ হাজার টাকা আর যদি হেরে যায় তাহলে বিনিয়োগকৃত টাকা চলে যাবে সাইটের পরিচালনাকারীদের কাছে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জানা যায়, ওয়ান এক্স বেটসহ বাংলাদেশে প্রচলিত যতগুলো বেটিং সাইট রয়েছে তার বেশিরভাগই মূলত রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। আবার জুয়ার এজেন্টগন এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক নিয়োগ দেন। ওয়ান এক্স বেটের অন্যতম একজন বাংলাদেশী এজেন্ট হচ্ছে বরিশালের তারেক রহমান ওরফে তুহিন নামীয় এক ব্যক্তি। জুয়ার এজেন্টের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সে গ্রেফতারকৃত সাইফ বিন ওহিদুল ওরফে বিপুকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয় ও পরবর্তীতে তাকে পার্টনার হিসেবে এজেন্টশিপ দেয়। এই বিপু আবার এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গ্রেফতারকৃত রাসেল শেখ, সাব্বির হোসেন, সোহাগ হোসেন, মাইনুদ্দিউদ্দিন শিকদার ওরফে ছোটন ও ইমন হোসেনদেরকে নিয়োগ দেয়। যারা টেকনোলজিতে বেশ দক্ষ। এরা বিপু ও তুহিনের জুয়ার চ্যানেলে সমস্ত লেনদেন ও এ্যাপস পরিচালনা করে থাকে। পলাতক তারেক রহামান ওরফে তুহিনসহ এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারেও তৎপর রয়েছে সিআইডি।
ডিআই/এসকে