
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা ট্যাক্স বকেয়া পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। স্বপ্রণোদিত হয়ে কর না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি করেছেন তিনি।
আজ রবিবার (১১ মে) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পৌরকর মেলা ২০২৫ উদ্বোধনকালে এ হুঁশিয়ারি করেন তিনি।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যাক্স দেন না, যাদের কাছে অনেক বকেয়া তারা এবার আর কোনো ছাড় পাবেন না। তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে ট্যাক্স না দিলে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন তাদের বাড়ি বাড়ি যাবে ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিটি কর্পোরেশন থেকে সর্বোচ্চ গ্রহণ করে কিন্তু সঠিকভাবে কর দেয় না বলে মন্তব্য করেন ডিএনসিসি প্রশাসক। এ সময় তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের বকেয়ার কথা তুলে ধরেন। ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা ট্যাক্স বকেয়া পড়ে আছে।
একইভাবে রেনেসাঁস হোটেল, ওয়েস্টিন হোটেল ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও এমন পরিমাণ ট্যাক্স বকেয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে সর্বোচ্চ গ্রহণ করে, অথচ ট্যাক্স প্রদান করে না। এটা অনৈতিক।’
এ সময় মোহাম্মদ এজাজ ডিএনসিসির বকেয়া কর ও গ্রাহকের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, কর তালিকা থাকা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা কর বকেয়া আছে প্রায় পঁচিশ হাজার লোকের কাছে। কর তালিকার বাইরে আছে এর প্রায় পাঁচ গুণের বেশি।’
সাধারণ লোক কর দিতে চায় কিন্তু কর দেয়ার প্রক্রিয়া জটিল তাই তারা কর দিতে যান না, এমন একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে- এ কথা উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘এবার আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পৌরকর অনলাইনে প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হয়েছে। ঘরে বসেই কর প্রদান করা যাবে।’
কর আদায়ের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা ডিএনসিসির অঞ্চলগুলোতে গণশুনানি করে দেখেছি, নাগরিকদের রাস্তা, ড্রেনেজ ও সড়কবাতির চাহিদা অনেক, কিন্তু সে অনুপাতে রাজস্ব আদায় নেই।’
রাজস্ব আদায় না হওয়ায় কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় চিহ্নিত হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ এজাজ। প্রথমত ডিএনসিসির নতুন সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা কর তালিকার অন্তর্ভুক্ত নেই। আবাসিক এলাকাগুলোতেও বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে, সেখান থেকে কোনো রাজস্ব আসছে না। নতুন করে হওয়া প্রচুর দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কর প্রদানের তালিকার আওতায় আনতে হবে।’
নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ডিএনসিসি গনশুনানির মাধ্যমে তাদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে বলে জানান প্রশাসক। মেলায় এসে কর দিলে তারা সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং এক টেবিলে বসে তাদের সব সমস্যা সমাধান করতে পারবে। তারাও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।
ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, ‘যারা কর দেয়া বা যারা কর দেয় না সবাইকেই সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। স্থায়ী লোকবল নিয়োগ করতে গেলে তাদের বেতন-ভাতা দিতে রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে রাজস্বের বড় অংশ ব্যয় হয়।’
এসব ব্যয় মাথায় রেখে কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ও পৌরকর প্রদান সহজীকরণ করতে এই পৌরকর মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো থেকে কর আদায় করা গেলে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে আদায় বেশি হতো। উদাহরণস্বরূপ তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কথা বলেন।
মেলা পরবর্তী সময়ে কর তালিকায় সব নাগরিককে আনার জন্য এসেসমেন্টের জন্য লোক পাঠানো হবে বলে জানান প্রশাসক। নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা স্বপ্রণোদিত হয়ে কর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পৌরকর প্রদান করুন। মেলায় আমরা ৭.৫ শতাংশ রিবেটের ব্যবস্থা রেখেছি। কোনো হয়রানি যেন না, সেজন্য অনলাইন পোর্টাল খোলা রাখা হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স যেমন ঘরে বসে পাচ্ছেন তেমনি হোল্ডিং ট্যাক্সও ঘরে বসে দেয়া যাবে।’
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রমুখ।
ডিআই/এসকে