
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আবারও একাধিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রশাসনিক অস্থিরতার অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে ভিসির একক সিদ্ধান্ত ও পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গত ২৯ এপ্রিল ২০২৫, বিজয়-২৪ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান। এর পরই উপাচার্যের নির্দেশে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফ উল ইসলামকে হলটির নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে, আরিফ উল ইসলামের এই নিয়োগ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নয়, বরং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ড. আব্দুল কাইয়ুমের সুপারিশেই হয়েছে। অথচ ওই হলেই আগে থেকেই আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশিক-ই-ইলাহী এবং আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাজীউর রহমান, যারা পদমর্যাদা ও অভিজ্ঞতায় নবনিযুক্ত প্রভোস্টের চেয়ে অগ্রগণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এই নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই একে ভিসির স্বেচ্ছাচারিতার জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।এছাড়া সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, যিনি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে বহাল রয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ দমন করতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সাধারণ ডায়েরির অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গোপন সিন্ডিকেট সভায় ভিসি নিজেই রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন, অথচ তার নিজের প্রশাসনিক দপ্তরেই কাজের স্থবিরতা প্রকট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী জেবুন্নেসা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২ মে মারা যান। তার চিকিৎসা সহায়তার জন্য করা আবেদন পাঁচ মাসেও প্রশাসন বিবেচনায় না নেওয়ায়, অনেকেই এটিকে প্রশাসনের চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষক সংকট, সেশনজট ও আবাসন সমস্যার মতো মৌলিক ইস্যুগুলোর কোনো কার্যকর সমাধানে বর্তমান উপাচার্য ড. সুচিতা শরমিন উদ্যোগ নেননি বলেই অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতার পাশাপাশি একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে। এই দুর্বৃত্তায়িত ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে যথাসময়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।