নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজার জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রবাসী পরিবারের উপর একের পর এক হামলা, হুমকি এবং মিথ্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে মৌলভী বাজার জাগৎসীর ৮নং কণকপুর ইউনিয়নের নাগড়া গ্রামের বাসিন্দা তারই সহোদর চাচা মাহফুজ রহমান মোবারক ও চাচি রত্না বেগম ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর দাবি, পারিবারিক জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চাচা-চাচি মিলে এসএসসি পরীক্ষার্থী সাহেল ইসলাম সোহান ও তার পরিবারকে একটি সাজানো মামলায় জড়িয়ে ফেলে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
ভুক্তভোগী হালিমা ইসলাম (৪৩) জানান, তার স্বামী একজন সৌদি প্রবাসী। তাদের একমাত্র ছেলে সাহেল ইসলাম সোহান (১৭) ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মাহফুজুর রহমান মোবারক ভাড়াটে সন্ত্রাসী দ্বারা তার ছেলের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়, যাতে সে গুরুতর আহত হয়ে একটি দাঁত হারায়। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় কিশোরগ্যাং লিডার তামিমসহ হামলাকারীদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-২০/৩১০, তারিখ-১৩/১০/২০২৪)।
তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তীর কার্যত নিষ্ক্রিয়তায় দীর্ঘ ছয় মাসেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি। এলাকায় শিরোগ্যাং নামে পরিচিত ঐসকল সন্ত্রাসীরা (আসামিরা) মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাহেল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
পরবর্তীতে চলতি এসএসসি পরীক্ষার সময়ে, ১২ এপ্রিল ২০২৫ মাহফুজুর রহমান মোবারক ও তার সহযোগী মাসুক, কাইয়ুম, কামাল, ইকবাল ও সোয়েব ওই পরিবারের বাড়িতে হামলা চালায়। হালিমা ইসলাম ও তার কন্যা ছাবিলা ইসলাম (১৪) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন এবং ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। সাহেল ইসলাম প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরলে তাকেও কাঠের টেবিল দিয়ে আঘাত করা হয়।
আত্মরক্ষার সময় অভিযুক্ত মোবারকের চোখে সামান্য আঘাত লাগলে, সেটিকে কেন্দ্র করে ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্রবাসী সামছুল ইসলাম তার স্ত্রী হালিমা ইসলাম ও ছেলে সাহেল ইসলাম সোহানকে আসামি করে মোবারকের স্ত্রী রত্না বেগম বাদী হয়ে ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। বিচারক শিশু আদালত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে মা হালিমা ইসলাম ও ছেলে সোহানের জামিন মঞ্জুর করেন।
পরবর্তীতে নিরাপত্তার অভাবে হালিমা ইসলাম তার সন্তানদের নিয়ে ২-৩ দিনের জন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিলে প্রতিপক্ষ তাদের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো কার্যকর সহায়তা পাননি।
সবশেষে, সাহেল ইসলামের বিরুদ্ধে “হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের” অভিযোগে জামিন বাতিলের আবেদন করা হয় এবং তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনোজ কুমার সরকার মনগড়া প্রতিবেদন প্রদান করলে, আদালত গত ২৬ মে তার জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
বর্তমানে সাহেল ইসলাম কারাগারে, আর হালিমা ইসলাম তার কন্যা ছাবিলাকে নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। হালিমা বলেন, “একদিকে আমার একমাত্র নাবালক ছেলে মিথ্যা মামলায় জেলে, অন্যদিকে আমি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের জীবন আতঙ্কে কাটছে।
তিনি প্রশাসনের কাছে তার পরিবারের নিরাপত্তা, ঘরের তালা খুলে বসবাসের অধিকার এবং মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী সোহানের স্কুল শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, সে একজন মেধাবী ছাত্র এবং চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। অথচ হঠাৎ করে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একটি মিথ্যা মামলা, যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকেই সোহানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আশা করি সোহানের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে মাহামান্য আদালত সোহান ও তার পরিবারকে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেও মামলার বাদী রত্না বেগম ও তার স্বামী মাহফুজুর রহমান মোবারকের কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নিতে পারিনি। সোহানকে ফাঁসানোর বিষয়টি পরিকল্পিত, ন্যক্কারজনক এবং একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পায়তারা। তারা দ্রুত মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার এবং সোহানের ভবিষ্যৎ রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত ও প্রভাবশালীদের দাপটে সাধারণ নাগরিকরা ক্রমাগত নিরাপত্তাহীনতায় পড়ছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে উর্ধ্বতন প্রশাসন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।