
সিকদার লিটন ওরফে টুটুল। আপাদমস্তক একজন প্রতারক। যেখানে যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে সুবিধা নেওয়া যায় সেটাই করেন। কখনো এমপির এপিএস, কখনও ব্যবসায়ী, কখনও সরকারি কর্মকর্তা কখনও সাংবাদিক পরিচয় দেন তিনি। এসব পরিচয়ের আড়ালে সে মূলত ভয়ঙ্কর প্রতারক। প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত সিকদার লিটনের অত্যাচারে তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে গ্রামবাসী। সর্বশেষ নিজের বাবা-মা মারা গেলেও তাদের জানাজায় পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারেনি সে। এমনকি নিজের শ্বশুর জাপান মুন্সির নামে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দেন। সিকদার লিটন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক সিকদারের ছেলে। সে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুর হোসেনের এপিএস পরিচয় দিতো।
এদিকে ভয়ঙ্কর এই প্রতারক এবার আদালতের সামনে নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। একইসঙ্গে আদালতকে বিভ্রান্তি করারও চেষ্টা করে। বুধবার ভাটারা থানার একটি হত্যা মামলায় সিকদার লিটনকে গ্রেফতার দেখানোর শুনানির তারিখ ধার্য ছিল। সকালে প্রতারক সিকদার লিটনকে আদালতে আনা হলে সে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে। বলে__’আমি সাংবাদিক। আমি কেন হত্যা মামলার আসামি হলাম? আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’
তবে আদালতে তার এসব কথা আমলে না নিয়ে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। মূলত নিজেকে আত্মরক্ষায় অভিনবপন্থা নেয় এই প্রতারক। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। যাতে ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলাকে বিতর্কিত করা যায়। যাতে ফ্যাসিস্ট পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে সুবিধা দেওয়া যায়। সিকদার লিটন বর্হিঃবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন__ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হয়রানী মূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের ফাঁসাচ্ছে। তার এমন হীন-চরিতার্থ যাতে সফল না হয় সেটা দায়িত্বশীলদের দেখতে বলছে শহীদ জাহাঙ্গীরের পরিবার।
সূত্র বলছে, আদালত প্রাঙ্গণে নিজেকে একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়েছে সিকদার লিটন। তবে ওই গণমাধ্যমের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কর্তৃপক্ষ তাকে চেনেও না। কোনো দিন তাকে প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়নি। তবে অনেক আগে পত্রিকার কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছিলেন__ তাদের পত্রিকার নাম ভাঙিয়ে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। তবে ২০২০ সালে সিকদার লিটন গ্রেপ্তার পর থেকে এটা আর শোনেননি।
জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ভাটারার কুড়িল জোয়ার সাহারা কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা যান মো. জাহাঙ্গীর। এই মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলায় এজাহারনামীয় আসামি সিকদার লিটন। পুলিশ আজ তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখাতে আদালতে তুলেছিলো।
নিজে ধুয়া তুলসির পাতা:
সিকদার লিটন দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে মামলা বাণিজ্যে মেনে ওঠে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (তিনমাসে) তার ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্টে শুধু লেনদেনই হয়েছে সাড়ে ২২ লাখ টাকা। এসব টাকা কীভাবে তার বিকাশে এলো? কারণ সিকদার লিটনের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা বা উপার্জন ছিল না। সে মূলত এসব টাকা উপার্জন করেছে মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে। তাছাড়া ৫ আগস্ট কেরানীগঞ্জ কারাগারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মো. জাভেদ। এই শহীদের পরিবার সিকদার লিটনকে চেনেনও না জানেনও না। কিন্তু জাভেদের খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে মামলা করে বসে সিকদার লিটন। এই মামলায় সমাজের প্রতিষ্ঠিত অনেককে আসামি করার নামে বাণিজ্য করেছে সে। ঘটনা জানাজানি হলে নিহত জাভেদের ভাই মাঈনুদ্দীন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে পাবনার ইন্দ্রজিৎ শীল নামের একজন ব্যবসায়ী ২০১৮ সালে ব্যবসায়িক প্রতারণা ও অর্থআত্মসাৎতের মামলা করে। মামলাটি সিআইডি, থানাপুলিশ ও দুদক তদন্ত শেষ আদালতে প্রতিবেদন দেয়। তাছাড়া খুলনা ও ফরিদপুরেরও অজস্র মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর সব অপকর্মে পটু সিকদার লিটন এবার শহীদ পরিবারগুলোকে বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
ডিআই/এসকে