
নড়াইল জোলা প্রতিনিধি: নড়াইল সদরের নবগঙ্গা নদীতে চালিতাতলা এবং লোহাগড়া উপজেলার নলদী জমিদারদের ঘাটে দুটি সেতুর নির্মান কাজ চলছে কচ্ছপের গতিতে। তিন বার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। দীর্ঘদিন সেতু না থাকায় পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকাবাসীরা। জেলা শহরে যেতে মাত্র তের কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ঘুরতে হচ্ছে ২৫ কিলোমিটার। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলার অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ। দ্রুত সেতু দুটির নির্মান কাজ শেষ করার দাবী করেছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ। সরজমিন গিয়ে জানা গেছে, নড়াইল সদর এবং লোহাগড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে নবগঙ্গা নদী। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবিতে চালিতাতলা খেয়া ঘাটে ১০ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মানের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর এলজিইডি। ২০২১ সালের অক্টোবরে কাজটি শুরু করেন যশোরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারের গাফিলতিতে শুরু থেকেই নিমিঝিমি ভাবে চলছে সেতুটির কাজ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তখন কাজ শেষ হয়েছিল মাত্র ২০ শতাংশ। পরবর্তীতে কাজের মেয়াদ আরও তিন বার বৃদ্ধি করে এলজিইডি। বর্তমানে কাজের অগ্রগতী হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ।এলাকাবাসী জানান, ধীর গতিতে কাজ চলায় ভোগান্তিতে পড়েছে দুটি উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে লোহাগড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ চালিতাতলা, দত্তপাড়া এবং নড়াইল শহরে প্রয়োজনীয় কাজে আসা- যাওয়া করে। কাঞ্চনপুর গ্রামের মো. হাসেম শেখ বলেন, দীর্ঘ দিনেও এখানে সেতু নির্মান না হওয়ায় ঘাটের একটি মাত্র নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয় নারী, পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষের। গন্ডব গ্রামের ইমান উদ্দিন শেখ বলেন, সেতু না থাকায় চালিতাতলা ঘাট থেকে নড়াইল শহরের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার হলেও ২৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে নড়াইল শহরে যেতে হয় স্থানীয়দের। চালিঘাট গ্রামের তারিক শেখ বলেন, বেশি সমস্যা হয় রোগীদের ছোট নৌকায় রোগীরা পারাপার হতে পারেনা। অনেক সময় ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার জোর দাবী এ সকল ভুক্তভোগীদের। এদিকে একই অবস্থা নবগঙ্গা নদীতে নির্মানাধীন নলদী জমিদার বাড়ি ঘাটের সেতুরও। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দুই বছর মেয়াদে ৯ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মান কাজ শুরু করে ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রথম বার মেয়াদ শেষে কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। পরে একে একে আরও তিন বার মেয়াদ বৃদ্ধি করে এলজিইডি। ৩য় দফার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর। বর্তমানে এ কাজের অগ্রগতী মাত্র ৬০ শতাংশ। কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য নতুন করে আবারও মেয়াদ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছেন কতৃপক্ষ। গুরুত্বপূর্ন এই সেতুটি নির্মান হলে সেতু বন্ধন হবে লোহাগড়া উপজেলার সাথে নড়াইল জেলা শহরের। মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার মানুষের নড়াইল শহরে আসা-যাওয়ার জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ন এ সেতুটি। এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, এই সেতু (দুটি সেতু) এলাকায় রয়েছে রায়গা, ভুমুরদিয়া, চালিতাতলা, দত্তপাড়া, নলদী, মিঠাপুরসহ বেশ কয়েকটি হাট-বাজার। এ সকল হাটে ও বাজারে অন্তত ২/৩ হাজার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেতু দুটি চালু হলে এ সকল বাজারের ব্যাবসা বানিজ্য চাঙ্গা হবে এবং এ জনপদের অর্থনীতি বেগবান হবে বলে মনে করেন তারা।চালিতাতলা বাজারের ব্যাবসায়ী মো. আল আমিন কাজী বলেন, সেতু না থাকায় স্থানীয়দের পারাপারে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে, বাজারে ঠিকমত সাধারন মানুষ আসতে পারছেনা। ফলে দোকানে কাংখিত বেচাকেনা হচ্ছেনা। সেতু চালু হলে আশাকরি ব্যাবসা অনেক ভাল হবে। আর এক ব্যাবসায়ী ইমারত হোসেন বলেন, নৌকায় মালামাল পারাপারে খচর অনেক বেশি হয়, সেতু থাকলে পারাপারের খরচ কমে যাবে তখন বিভিন্ন জিনিসের দামও কমে যাবে। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবী বাজারের সকল ব্যাবসায়ীদের। চালিতাতলা ঘাটের সেতু নির্মানের ঠিকাদার এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। আর নলদী জমিদারদের ঘাটে সেতু নির্মানের ঠিকাদারকে বার বার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে নড়াইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ড বলেন, সেতু দুটি এলাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেতু দুটি দিয়ে যান চলাচলে উপযোগী হলে এলাকার অসংখ্য মানুষ উপকৃত হবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে সেতু দুটির কাজ শেষ হবে।