বরিশালের ঝালকাঠি জেলা কারাগারে কারারক্ষী নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো পরিবেশ। মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, যথাযথ কাগজপত্র ও নির্ধারিত উচ্চতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং জোরপূর্বক মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, তাঁদের অনেকের সঙ্গে থাকা সার্টিফিকেটের ফটোকপি ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়। পটুয়াখালী থেকে আসা মাহফুজুর রহমান, ভোলা থেকে মো. শাওন, বরগুনা থেকে ফাহিম, পিরোজপুর থেকে আবির কাজী, বরিশাল থেকে মো. ছাব্বির এবং ঝালকাঠি থেকে রাহাত অভিযোগ করেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন যমুনা টিভির ঝালকাঠি প্রতিনিধি দুলাল সাহা। তিনি জানান, ঢাকাফেরত জেল সুপার ফরহাদ ও তাঁর সঙ্গে থাকা কারারক্ষীরা তাঁর ক্যামেরা ভাঙচুর করেন এবং শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শারীরিক পরীক্ষায় বাদ পড়া পরীক্ষার্থীরা মূল ফটকের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
অপরদিকে, এ বিষয়ে দায় এড়ান জেল সুপার মো. আব্দুল্লাহ ইবনে তোফাজ্জল হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে; আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।’ একইভাবে কারাধ্যক্ষ লিপি রানি সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চাকরিপ্রত্যাশীরা এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের অনুলিপি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমমানের কাছেও হাতে হাতে জমা দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা থেকে আগত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। উচ্চতা, বুকের মাপ ও অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতা পূরণ করলেও তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে সাইড করে রাখা হয়। ঝালকাঠির প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে অন্য জেলার প্রার্থীদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, প্রতিবাদ জানালে কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে, গায়ে হাত তোলে এবং শারীরিকভাবে হয়রানি করে। চাকরিপ্রার্থীরা এই অনিয়ম তদন্তের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।