ভয়ঙ্কর প্রতারক,বিভিন্ন মামলা বাণিজ্যের মূলহোতা এবং বহু মামলার আসামি সিকদার লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদে একদিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ।
রবিবার ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ সিকদার লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে।
জানা গেছে, ৫ মার্চ ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল সিকদার লিটনকে গ্রেফতার করে। এরপর তাকে আলফাডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করে। ১৩ আগস্ট হওয়া বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে সেই মামলায় সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিকদার লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আলফাডাঙ্গা থানায় হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ১৩ আগস্ট আলফাডাঙ্গা আরিফুজ্জামান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন চৌরাস্তায় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বে-আইনী জনতাবদ্ধ হয়ে পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মিছিল শুরু হয়। এক পর্যায়ে আটক আসামী সিকদার লিটন টুটুল সহ অন্যান্য আসামীরা ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ভাংচুর করে। সিকদার লিটনসহ অজ্ঞত আসামীরা মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধনের লক্ষে শতশত ককটেল ও হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটাই এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহলরত গাড়ী ঘটনাস্থলে পৌছাইলে আসামী সিকদার লিটন সহ অন্যান্য এজাহার নামীয় আসামী এবং অজ্ঞাতনামা আসামী বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের খুন জখম করে লাশ মধুমতি নদীতে ভাসাইয়া দিবে বলিয়া হুমকি প্রদর্শন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। পরে ডিবি পুলিশ সিকদার লিটনকে গ্রেফতার করে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক সিকদারের ছেলে। সে ঢাকার কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ভাটারা থানায় হত্যা মামলা ও মোহাম্মদপুর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি সিকদার লিটন। এছাড়া ডিএমপির পল্লবী, কলাবাগান থানায় চাঁদাবাজি ও সাইবার অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে। তাছাড়া ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এরবাইরে দেড়ডজনের বেশি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে ভয়ঙ্কর এই প্রতারকের বিরুদ্ধে।
নানা অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে আগেও কয়েকবার কারাগারে থাকতে হয়েছে অসংখ্য মামলার এই আসামিকে। ২০২৪ সালে দীর্ঘ প্রায় চারবছর জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আবারও প্রতারনা, মামলা বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। নভেম্বর থেকে পরবর্তী তিনমাসে তার ব্যাক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্টে সাড়ে ২২ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মো. জাবেদ নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। ১৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ বিষয়ে পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো মামলার পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ, সিকদার লিটন নিজেকে জাবেদের খালাতো ভাই দাবি করে ঢাকার আদালতে একটি সিআর মামলার আবেদন করে, যা সম্পূর্ণ বানোয়াট।
এই সিকদার লিটন নামের ব্যক্তির সঙ্গে নিহত জাবেদের পরিবারের কোনো রকম আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এমনকি তাকে কোথাও কোনো মামলার আবেদন করার অনুমতি, সম্মতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নিও দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় নিহত জাবেদের ভাই মাইনুদ্দীন মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার তদন্ত করছে পুলিশ।
ডিআই/এসকে