
যাত্রাবাড়ীতে পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য স্বামী মো. হুমায়ুন কবিরকে (৪৪) হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্ত্রীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী মোসা. সালমা বেগম (৩২), মোছা. মরিয়ম বেগম ওরফে মলি (৩৮), ফজলে রাব্বি ওরফে শুভ (২৩), পলি বেগম (৩৫), মো. কায়েচ হাওলাদার (৩৪) ও একজন কিশোর।
বুধবার রাতে ঢাকা ও বরিশালে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১ মে) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকালে সংবাদ পেয়ে দয়াগঞ্জ বটতলা জজ মিয়ার বাড়ির ভাড়া বাসার গেটের কাছে থেকে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের মরদেহ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মৃত পুলিশ সদস্যের ভাই খোকন হাওলাদার বাদী হয়ে গত ২৯ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবির ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিবহন বিভাগে জলকামান ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী সালমা বেগম, ছেলে কাওসার হোসেন ইমন (১৩) এবং মেয়ে তুবা (৭) নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন। মো. রাজিব হোসেন নামে এক আত্মীয়ের সাথে সালমা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, যা হুমায়ুন কবির জানতে পারেন। এ নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল একটি পারিবারিক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সালমা বেগম ও তার ভাই মো. মানিকের সঙ্গে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে নিহত হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী সালমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজিব হোসেন ও ওই ভবনের চারতলায় থাকা তার আত্মীয় মরিয়মসহ আরও কয়েকজন মিলে হুমায়ুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
থানা সূত্রে জানা যায়,মামলাটি তদন্তকালে ভিকটিমের দুই সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের জড়িত এজাহারনামীয় আসামি নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী মোসা. সালমা বেগম ও মো. মরিয়ম বেগম ওরফে মলিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে ও প্রযুক্তির সহায়তায় আজ বরিশাল জেলা থেকে শুভ, রাফি, পলি ও কায়েসকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় নিহত পুলিশ সদস্য হুমায়ুনের দুটি মোবাইল ফোন শুভর কাছ থেকে জব্দ করা হয়।
ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা য়ায়, সালমা বেগমের সাথে তার আত্মীয় মো. রাজিব হোসেনের এক বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। গত রবিবার হুমায়ুন ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে আসেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্ত্রী সালমা ফার্মেসি থেকে কিনে আনা ঘুমের ওষুধ খাবারের সাথে মিশিয়ে তাকে খাওয়ায়। এতে হুমায়ুন অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমের হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে তাকে তারা হত্যা করে। হত্যার পর লাশ অন্যত্র সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে হত্যাকারীরা ভোর ৪টার দিকে লাশটি বাড়ির গেটের পাশে ফেলে রাখে।
গ্রেফতার সালমা বেগম ও মরিয়মকে বুধবার আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। অপর গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পলাতক রাজিবসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডিআই/এসকে