
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারের অন্যতম সহযোগী ও ক্যাশিয়ার সৈয়দ আনছার আলী গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার লালবাগের বুয়েট বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন— র্যাব-১০’র অভিযানিক দল আনছার আলীকে গ্রেফতার করে।
বৃহস্পতিবার র্যাব থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আনসার আলীর বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বাজড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আতর আলী।
জানা গেছে, সৈয়দ আনসার আলী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক পদে চাকরি পান। তবে কোনোদিন কলেজে ক্লাস নিতে যেতেন না কিন্তু প্রতিমাসে বেতন তুলতেন। সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদারের অন্যতম সহযোগী ছিল এই আনছার আলী। লিয়াকত সিকদারের অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ ও সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব ছিল তার। তাকে ক্যাশিয়ার হিসেবে রাখা হয়েছিল।
স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন— সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আনসার আলী সরকারি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদারের অন্যতম ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিসিএস সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও চাকরি বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল তার। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হাজারো বেকার যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছিল এই আনসার আলী। অনেকে চাকরির আশায় টাকা দিয়ে চাকরি তো দূরে থাক টাকাও ফেরত পাননি। এমন অনেকে নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
র্যাব জানিয়েছে,লালবাগ থেকে প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার সৈয়দ আনছার আলী ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার একটি প্রতারণা মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একসঙ্গে আদালত তাকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল ভয়ঙ্কর এই প্রতারক। গ্রেপ্তারের পর তাকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ‘আসামি আনছার আলীকে র্যাব আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আদালতের মাধ্যমে হয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
ছাত্ররাজনীতিকে পুঁজি করে হাজার কোটির মালিক:
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত সিকদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে তার স্ত্রী মাহমুদা আলী সিকদার এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্ররাজনীতিকে পুঁজি করে ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ পান লিয়াকত সিকদার। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সুবাদে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ ভবন ও খাদ্য ভবনে তার আধিপত্য বেশি ছিল। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে কাজ আদায় করেছেন। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প থেকেই কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
অত্যন্ত প্রভাবশালী এই নেতা ছাত্রলীগকে সব সময় ‘তুরুপের তাস’ মনে করতেন। ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতার অনেকের কাছেই লিয়াকত সিকদার ভবিষ্যৎ নেতা বানানোর কারিগর হিসেবে পরিচিত ছিল। তাই সকাল-বিকাল অনেক ছাত্রনেতাই তার বাসায় যেতেন। সালাম করে দোয়া নিয়ে আসতেন।
জানা গেছে, গত এক দশকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও প্রভাবশালী যত ইউনিট কমিটি হয়েছে, তার সবই লিয়াকতের ইশারায়। বদৌলতে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন তিনি। ছাত্রলীগের যখন যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ইউনিট কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু দাপ্তরিক প্যাডে স্বাক্ষর করাই ছিল তার কাজ।
ছাত্রলীগের দাপটে লিয়াকত সিকদার রাজধানীতে ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্লটের মালিক হওয়া এবং ঠিকাদারি ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অল্প সময়ে বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন। গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজসহ ক্রীড়া পরিষদ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন টেন্ডারের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে রয়েছে কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডি নামে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পাওয়ার কানেকশন নামে রাজধানীর আকরাম টাওয়ারে একটি ফ্লোরে অফিস করতেন। এই অফিস থেকে মূলত বিদ্যুৎ ভবনের টেন্ডার বাগিয়ে নিতেন তিনি। ঢাকার সেগুনবাগিচায় রয়েছে লিয়াকতের সুরম্য ফ্ল্যাট।
ডিআই/এসকে