কুয়েল ইসলাম সিহাত, বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছ। কিন্তু আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টেদের মতো এখনো সেই লুটপাট, দখলদারী, চাঁদাবাজি, মাফিয়াদের রাজনীতি চলছে। সারা দেশে গণ-অভ্যুত্থানের পরও এসবের পরিবর্তন হয় নাই।
তিনি শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড়ে শেরেবাংলা পার্কের মুক্তমঞ্চে গণ-অধিকার পরিষদ পঞ্চগড় জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে এসব কথা বলেন।
সাবেক ভিপি নুর বলেন, ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে অনেক মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। আমরা চাই নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ যেন তৈরি না হয়। ঠিক একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো যারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের মধ্যে পরিচিত, তাদের মাঝেও যেন ফ্যাসিবাদী চরিত্র না আসে।
তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের চেহারাটা বদলালেও তাদের অপকর্ম কিন্তু থেমে নেই। খাওয়া-দাওয়ার পার্টি বদলেছে কিন্তু দুর্বৃত্তরা বদলায়নি।
তিনি বলেন, ২৪ গণঅভ্যুত্থানে শুধুমাত্র আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়নি এ দেশের ছাত্রজনতা ভারতীয় আগ্রাসন এবং
ভিপি নুর আরও বলেন, ২৪ গণঅভ্যুত্থানে শুধুমাত্র আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়তে এ দেশের ছাত্রজনতা ভারতীয় আগ্রাসন এবং আধিপত্যকেও উচ্ছেদ করেছে। পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠিকানা হবে না। তাদের আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
ভারতের উদ্দেশ্যে ভিপি নুর বলেন, বাংলাদেশ দখল এত সহজ না। বর্তমানে ভারতকেই একদিকে চীন, অন্যদিকে পাকিস্তান গুতা দিচ্ছে। চীন এবং পাকিস্তানকে সামলাতেই তো ভারতের জান শেষ। বাংলাদেশের সঙ্গে লাগতে আসবেন না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা চাই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবে, গোলামির নয়।
তিনি আরও বলেন, আমার দেশের মানুষ সীমান্তে মরে। বিশেষ করে পঞ্চগড় জেলা তিন দিকে ভারত সীমান্ত হওয়ায়
ভারতীয় রক্ষিবাহিনী গুলি করে আমাদের ভাইদেরকে হত্যা করচ্ছে। আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ করেনি। বরং সরকারের মন্ত্রীরা নির্লজ্জ বেহায়ার মত বলেছে ভারতের সঙ্গে আমাদের ভাই বোনের মত সম্পর্ক। এখন এই নির্লজ্জ বেহায়ারা জনগণের প্রতিরোধের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে নাম পরিবর্তন করে হিন্দু সেজেছে। এতেই প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ ছিলো ভারতের দাস, গোলামী করা রাজনৈতিক দল।
ভিপি নুর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ভুলে গেলে চলবেনা যে তাদের সুবিধাবাজি, ভাওতাবাজি চিন্তাভাবনার কারণেই গত ১৬ বছর তাদের ডাকে জনগণ রাস্তায় নামেনি। ছাত্রজনতা তরুনদের বিশ্বাস করেই বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করার জন্য বুক চেতিয়ে লড়াই করেছে।
তিনি আরোও বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, প্রত্যেকটি আন্দোলনেই সাধারণ শ্রমিক, কৃষক, জনতা লড়াই সংগ্রাম করেছে, আর এর ফল ভোগ করেছে এ দেশের ভাওতাবাজ ভন্ড রাজনীতিবীদরা। আমরা বলতে চাই, আর ভাওতাবাজ ভন্ড রাজনীতিবীদদের পিছনে ঘুরে দেশ, সমাজ, এলাকার ক্ষতি করা যাবেনা, ভবিষ্যত নষ্ট করা যাবেনা। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সমাজকে পরিবর্তনের জন্য সাধারণ ছাত্রজনতাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আওয়ামী লীগের আমলে যে লুটপাট, দখলদারি, চাঁদাবাজি আর মাফিয়াদের রাজনীতি চলেছে-গণঅভ্যুত্থানের পরও কিন্তু তার পরিবর্তন হয় নাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও ট্রাক, টেম্পু, বাস স্ট্যান্ড থেকে আগে যেভাবে চাঁদা তোলা হতো, এখনও তা বন্ধ হয়নি। আমরা জীবন দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হটিয়েছি, বিতাড়িত করেছি। তাহলে এখন চাঁদাবাজ, দখলদার কারা? আমরা একটা পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলি। বিভিন্ন রাজননৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে বলি- আপনাদের স্বভাব-চরিত্র যদি আওয়ামী লীগের মত হয়, জনগণ কিন্তু ভোটের মাঠে জবাব দেবে।
সমাবেশে ভিপি নূর আগামী সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনের গণঅধিকার পরিষদের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মাহফুজুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেন। গণসমাবেশে জেলার পাঁচ উপজেলার নেতাকর্মীসহ হাজারও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
পঞ্চগড় শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় দলটির মুখপাত্র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর আসাদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, জাগপার পঞ্চগড় শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহমান বিপ্লব, বাংলাদেশ জাসদের পঞ্চগড় শাখার সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল, গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক সাজেদুর রহমানসহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
এর আগে গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুর পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় পথসভায় ব্ক্তব্য রাখেন।