ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
বাংলাদেশ জার্নালিস্ট প্রটেক্ট কমিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
পঞ্চগড়ের বোদায় অনলাইন জুয়াকে লাল কার্ড প্রদর্শন
খুলনার বটিয়াঘাটায় এলজিইডিতে দুদকের অভিযান
দীপ্ত টিভির সংবাদ বিভাগ সরকার বন্ধ করতে বলেনি : তথ্য উপদেষ্টা
বকশীগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
পটুয়াখালীতে ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা
কলাপাড়ায় ৯শ’ প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে
কলাপাড়ায় পতিত জমি-বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পুষ্টিবাগান বিষয়ক প্রশিক্ষণ
নওগাঁয় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১৪ বছরের ছাত্রীকে গণধর্ষণ:-২ জনের যাবজ্জীবন
স্বামী-স্ত্রী দুজন পুলিশ সদস্য হলে একই জেলায় পদায়ন:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নড়াইলে হত্যা মামলার আসামি রহস্যজনক ভাবে খুন
ঢাকার মূলসড়কে কোনো ব্যাটারীচালিত রিক্সা চলতে পারবে না:ডিএনসিসি প্রশাসক
বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে পুলিশের মতবিনিময় সভা
মদনে ধান কর্তন ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বরিশালে ‘বন্দুকযুদ্ধ : র‍্যাবের দাবি মানতে নারাজ স্থানীয়রা

ডেস্ক রিপোর্ট :
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ২১ এপ্রিল মাদকবিরোধী অভিযানে র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে’গুলিবিদ্ধ দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই পুলিশের কাছে।

তাদের মধ্যে কারফা আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম মোল্লা নিহত হয়েছেন এবং অপরজন এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব মোল্লা গুরুতর আহত। জন্মসনদ অনুযায়ী, সিয়ামের বয়স ছিল ১৭ বছর এবং রাকিবের ১৮ বছর।

কিন্তু, র‍্যাব-৮ গত ২২ এপ্রিল আগৈলঝাড়া থানায় যে এফআইআর দায়ের করেছে, সেখানে দুজনেরই বয়স লেখা হয়েছে ২০ বছর। বর্তমানে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে রাকিব।

এফআইআরে বলা হয়েছে, মাদক চোরাকারবারের জন্য একত্রিত হওয়ার বিষয়ে গোপন সংবাদ পেয়ে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে রত্নপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোল্লাপাড়া গ্রামের একটি কবরস্থানে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে তারা সিয়াম ও রাকিবের কাছ থেকে ৩৯৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। অভিযানের সময় সেখানে উপস্থিত থাকা বাকিরা পালিয়ে যায়।

এফআইআরে আরও বলা হয়েছে, আটকের সময় চিৎকার করায় পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সিয়াম ও রাকিবকে সহযোগিতা করতে ফিরে আসে। একপর্যায়ে সিয়াম ও রাকিবও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং র‍্যাব সদস্যরা তাদের ধাওয়া করলে আসামিরা লাঠি দিয়ে আঘাত করে দুই র‍্যাব সদস্যকে গুরুতর আহত করে।

এফআইআর অনুযায়ী, পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজনদের একজন গুলি ছুড়লে এক র‍্যাব সদস্য পাঁচটি সতর্কতামূলক গুলি ছোড়েন। পরে র‍্যাব আহত দুই সদস্যকে উদ্ধার করে এবং জানতে পারে, গুরুতর আহত অবস্থায় সিয়াম গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছে।

র‍্যাব সিয়াম ও রাকিবসহ ১০ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মাদক মামলা করে এবং পলাতক সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও হত্যা সংক্রান্ত আরেকটি মামলা করা হয়।

এফআইআরের সাক্ষী ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’
এফআইআরে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সুখদেব বাড়ৈ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সিয়াম ও রাকিবের দেহ তল্লাশির ঘটনা দেখেছেন।

গতকাল সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হলে সুখদেব জানান, তিনি এমন কিছু দেখেননি।

দ্য ডেইলি স্টাররের তথ্য মতে তিনি বলেন, ‘আমি ওই ছেলেদেরও দেখিনি, কোনো মরদেহও দেখিনি। যেসময় ঘটনাটি ঘটার কথা বলা হচ্ছে, তখন আমি সেখানে ছিলাম না। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে রাত ১১টার দিকে আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমি তখন ওখানে গিয়ে কয়েকটা জুতা পড়ে থাকতে দেখেছি।’

সিয়াম ও রাকিবকে তিনি চেনেন না দাবি করে বলেন, ‘আমাকে স্বাক্ষী হতে বলা হয়েছে, তাই হয়েছি।’

স্থানীয়রা যা বলছেন
২৬ এপ্রিল ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় অন্তত ২৪-২৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযান যে জায়গায় চালানো হয়েছে সেটা মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয়দের দাবি, তারা সিয়াম বা রাকিবকে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে কখনো দেখেননি বা শোনেননি।

অভিযান চালানো কবরস্থানটির কাছের বাসিন্দা টিটু হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজের আগে মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় একজনের নেতৃত্বে কয়েকজন সেখানে যান। রাকিব ও সিয়াম তখন কাছের একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন।

টিটু বলেন,সেই সময় সাদা পোশাকে আসা র‌্যাব সদস্যরা কবরস্থান এলাকা ঘিরে ফেললে মাদক চোরাকারবারি দলের নেতা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করেন।’

‘চিৎকার শুনে সিয়াম ও রাকিবসহ আরও ৮-১০ জন ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং সাদা পোশাকে থাকা র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়,’ যোগ করেন তিনি। টিটুর স্ত্রী মিতু আক্তার বলেন, ‘ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা গুলি চালালে এলাকাবাসী পালিয়ে যায়।’

স্থানীয়রা জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে রাকিব পুকুরে পড়ে গেলেও সাঁতার কেটে পাড়ে ওঠেন। তাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই রাতেই ১১টার দিকে তার অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতালের সহকারী সার্জন আকরাম হোসেন জানান, রাকিবের পেটে গুলি লেগেছিল।

গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া মৃত্যু সনদ অনুযায়ী, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিয়ামকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, সিয়াম ছিল খুবই শান্ত ছেলে। বেশিরভাগ সময় সে বাড়িতে বা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।

সিয়ামের চাচাতো বোন মিম আক্তার বলেন, ‘সিয়াম কখনোই মাদক বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে বুঝতে না পেরে ওই সময়ে ঘটনাস্থলে চলে গিয়েছিল।’

রাকিবের ভাবী নাসরিন বেগমও একই কথাই বলেন। তার ভাষ্য, ‘ডাক্তাররা তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু, এটা স্পষ্ট যে সে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিল না।’

সিয়াম হত্যার প্রতিবাদে গত ২৩ এপ্রিল সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। তার চাচাতো বোন মিম বলেন, ‘আমরা বিচার চাই।’

পুলিশ যা বলছে
এই মাদক উদ্ধার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আগৈলঝাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এখনও এমন কোনো তথ্য পাইনি যেটা থেকে বলতে পারব যে সিয়াম ও রাকিব মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিয়াম ও রাকিব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। আমাদের তদন্ত চলছে।’

অপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্বাস উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সিয়াম ও রাকিবের বিরুদ্ধে আগে কোনো অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড পাওয়া যায়নি।

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউল ইসলাম জানান, অভিযানের বিষয়ে আগে থেকে পুলিশকে কিছু জানায়নি র‌্যাব।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের এমন কোনো অভিযান বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল না।’

যোগাযোগ করা হলে এই মামলার অভিযোগকারী র‌্যাব-৮-এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার শেখ রিয়াজুল ইসলাম মন্তব্য করেন, তিনি তদন্তাধীন মামলা নিয়ে কিছু বলতে চান না। এ বিষয়ে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। সূত্র : দ্যা ডেইলি স্টার বাংলা।

র‌্যাব-৮-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মাহমুদুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত সিয়াম ও রাকিবের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড পাওয়া যায়নি।’

শেয়ার করুনঃ