
মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে ঝালকাঠির রাজাপুরে আবারও চালু হয়েছে বন্ধ হওয়া অবৈধ ইটভাটা। সাবেক সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের ভাতিজা মো. ফেরদৌসের মালিকানাধীন ‘সেভেন স্টার ব্রিকস’ নামের ভাটাটি, যেটি পরিবেশ বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে প্রশাসন কর্তৃক চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, ফের পুরোদমে কার্যক্রম চালু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইট কাটা ও পোড়ানোর কাজ চলছিল দেদারসে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাটির কাজ করা শ্রমিকরা সরঞ্জাম ফেলে দ্রুত সরে পড়ে। কেবল ক্লিনের (চুল্লি) দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শ্রমিক তাদের অবস্থানে থাকেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকির অভাবে অবৈধ এই ইটভাটা ফের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ মিয়া, মিন্টু মৃধা এবং সেকান্দার আলী জানান, ভাটার নিকটবর্তী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কারণে সেভেন স্টার ব্রিকস পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে কোনো ছাড়পত্র পায়নি। তবুও গত মৌসুমে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চালু রাখায় তিন মাস আগে রাজাপুর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ভাটাটি বন্ধ করে দিয়ে বিপুল পরিমাণ কাঁচা ইট ধ্বংস করে। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবারও নিয়মবহির্ভূতভাবে কার্যক্রম শুরু করে ভাটাটির মালিকপক্ষ।
বাংলাদেশে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এটি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন সব ইটভাটা অবৈধ এবং সেগুলো উচ্ছেদ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেভেন স্টার ব্রিকসের মালিক মো. ফেরদৌস বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের কাঁচা ইট ধ্বংস করে দিয়ে ভাটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে সরকারকে ভ্যাটসহ বিভিন্ন খাতে যে লোকসান হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে আমরা কিছু ইট পোড়াচ্ছি।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ঝালকাঠি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনজুমান নেছা বলেন, ‘আমরা কয়েক মাস আগে সেভেন স্টারসহ জেলার অনেক অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। কেউ যদি ছাড়পত্র ছাড়া গোপনে আবার চালু করে, তবে আইন অনুযায়ী দ্রুত আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, যাতে করে পরিবেশ বিধিমালার প্রতি সম্মান বজায় থাকে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম আর না ঘটে।