
জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত থাকা ও প্ররোচনার অভিযোগে এবার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তা ও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা করেছে নিহতের পরিবার।
৫ই আগষ্ট মিরপুর শেখ হাসিনার পতনের আগমুহূর্তে মাহফুজুল আলম শ্রাবণ (২১)কে গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযুক্তদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সকলের সম্পৃক্ততা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন উল্লেখ করে ঢাকার সিএমএম কোর্টে মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রাবনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী।
নিহত শ্রাবনের বাবার নাম মোশাররফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার দোগাছী এলাকায়। তিনি ঢাকার মিরপুর বসবাস করতেন। গত ৫ই আগস্ট দুপুরে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিলে আসামিরা তাকে মিরপুর থানার সামনে গুলি করে হত্যা করে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, নিহত শ্রাবনের শরীরে একাধিক গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করে বেড়িয়ে যায়। মুমূর্য অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরবর্তীতে স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। শ্রাবন নিহতের ৯ মাসের মাথায় গত ২০ এপ্রিল বড় ভাই আদালতে বাদী হয়ে এই মামলা করেন। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে একটি সূত্র এই মামলার তথ্য জানিয়েছে।
মিরপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মিরপুর থানা মামলাটি নথিভুক্ত করেন। বর্তমানে মামলাটি মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমন তদন্ত করছেন। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। মিরপুর থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মামলার আসামি সংখ্যা ৪০৮ জন। যাদের মধ্যে বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা এবং শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে হুকুমের আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহজ তার সরকারের মন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, সালমান রহমান, হাসান মাহমুদ, নসরুল হামিদ বিপুকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক তিন আইজপি, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ। জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ, একেএম শহীদুল হোক, হাবিবুর রহমান, আসাদুজ্জমান মিয়া, বিপ্লব কুমার, হারুনুর রশিদ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, মেয়র, দুদক চেয়ারম্যান, দুর্নীতিবাজ আমলা, চিহ্নিত ব্যবসায়ী, ব্যাংক মালিকের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রচারনায় আর্থিক সহযোগিতার অভিযোগ।রউফ তালুকদার, কামাল আব্দুন নাসের, নজরুল ইসলাম মজুমদার, এন আই খান, ফজলে নুর তাপস, নুর আলী, আহমেদ আকবর সোবহান, চৌধুরী নাফিস শরাফত, এস আলম প্রমুখ।
চিহ্নিত সাংবাদিক ও মিডিয়া সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কমকর্তাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের হত্যাকান্ড সহ বিভিন্ন অপরাধ ধামা চাপা দেয়ার মাধ্যমে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, মোর্শেদ আলম, ফারজানা রূপা,সাবান মাহমুদ, আরিফ হাসান, মাসুদ ভাট্টি, মোরশেদ আলম,ইকরাম মঈন চৌধুরী প্রমুখ।
চার শতাধিক আসামির তালিকায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মধ্যে আসাদুজ্জমান নুর ও এশিয়াটিক গ্রুপের গ্রুপের ব্যাবস্থপনা পরিচালক ও অভিনেতা ইরেশ যাকেরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন বলেন, এই মামলাটি আদালেতর নির্দেশে মিরপুর থানা নথিভুক্ত করেছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ওসি নিজেই। তবে তিনি বর্তমানে অসুস্থ রয়েছেন। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। ওসি স্যার থানায় আসলে কথা বলতে পারবেন।
ডিআই/এসকে