
গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরল হক নুর বলেছেন, তাদের অবস্থান পরিস্কার-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠিকানা হবেনা। আওয়ামী লীগ এ দেশে আর রাজনীতি করতে পারবেনা।
গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরল হক নুর বলেছেন, ২৪ গণঅভ্যুত্থানে শুধুমাত্র আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়নি এ দেশের ছাত্রজনতা ভারতীয় আগ্রাসন এবং আধিপত্যকেও উচ্ছেদ করেছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদ পঞ্চগড় শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দখল এত সহজ না। বর্তমানে ভারতকেই একদিকে চীন, অন্যদিকে পাকিস্তান গুঁতা দিচ্ছে। চীন এবং পাকিস্তানকে সামলাতেই তো ভারতের জান শেষ। বাংলাদেশের সঙ্গে লাগতে আসবেন না।
নূর বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশে এই ধরণের জঘন্য গণহত্যা, বর্বরতার পর কোন রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারেনি? পারবেনা।
নূরুল হক নুর বলেন, আমার দেশের মানুষ সীমান্তে মরে। বিশেষ করে পঞ্চগড় জেলা তিন দিকে ভারত সীমান্ত হওয়ায়
ভারতীয় রক্ষিবাহিনী গুলি করে আমাদের ভাইদেরকে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ করেনি। বরং সরকারের মন্ত্রীরা নির্লজ্জ বেহায়ার মত বলেছে ভারতের সঙ্গে আমাদের ভাই বোনের মত সম্পর্ক। এখন এই নির্লজ্জ বেহায়ারা জনগণের প্রতিরোধের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে নাম পরিবর্তন করে হিন্দু সেজেছে। এতেই প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ ছিলো ভারতের দাস, গোলামী করা রাজনৈতিক দল। প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে আমরা চাই, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবে, ন্যায্যতার সম্পর্ক হবে, গোলামির সম্পর্ক নয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ভুলে গেলে চলবেনা যে তাদের সুবিধাবাজি, ভাওতাবাজি চিন্তাভাবনার কারণেই গত ১৬ বছর তাদের ডাকে জনগণ রাস্তায় নামেনি। ছাত্রজনতা তরুনদের বিশ্বাস করেই বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করার জন্য বুক চেতিয়ে লড়াই করেছে।
তিনি আরোও বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, প্রত্যেকটি আন্দোলনেই সাধারণ শ্রমিক, কৃষক, জনতা লড়াই সংগ্রাম করেছে, আর এর ফল ভোগ করেছে এ দেশের ভাওতাবাজ ভন্ড রাজনীতিবীদরা। আমরা বলতে চাই, আর ভাওতাবাজ ভন্ড রাজনীতিবীদদের পিছনে ঘুরে দেশ, সমাজ, এলাকার ক্ষতি করা যাবেনা, ভবিষ্যত নষ্ট করা যাবেনা। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সমাজকে পরিবর্তনের জন্য সাধারণ ছাত্রজনতাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আওয়ামী লীগের আমলে যে লুটপাট, দখলদারি, চাঁদাবাজি আর মাফিয়াদের রাজনীতি চলেছে-গণঅভ্যুত্থানের পরও কিন্তু তার পরিবর্তন হয় নাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও ট্রাক, টেম্পু, বাস স্ট্যান্ড থেকে আগে যেভাবে চাঁদা তোলা হতো, এখনও তা বন্ধ হয়নি। আমরা জীবন দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হটিয়েছি, বিতাড়িত করেছি। তাহলে এখন চাঁদাবাজ, দখলদার কারা? আমরা একটা পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলি। বিভিন্ন রাজননৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে বলি- আপনাদের স্বভাব-চরিত্র যদি আওয়ামী লীগের মত হয়, জনগণ কিন্তু ভোটের মাঠে জবাব দেবে।
সমাবেশে ভিপি নূর আগামী সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনের গণঅধিকার পরিষদের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মাহফুজুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেন। গণসমাবেশে জেলার পাঁচ উপজেলার নেতাকর্মীসহ হাজারও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
পঞ্চগড় শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় দলটির মুখপাত্র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর আসাদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, জাগপার পঞ্চগড় শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহমান বিপ্লব, বাংলাদেশ জাসদের পঞ্চগড় শাখার সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল, গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক সাজেদুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পঞ্চগড় জেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
এর আগে গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুর পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় পথসভায় ব্ক্তব্য রাখেন।