
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় সামছুন নাহার সুবর্ণা নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ মৃত্যুর কারণ হিসেবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার প্রাথমিক তথ্যের কথা জানালেও নিহতের পরিবারের অভিযোগ,স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় ওই গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজন। ঘটনার পরপরই নিহতের স্বামী মো. রুবেল পলাতক রয়েছে।
শনিবার দুপুরে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এরআগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সুবর্ণচর উপজেলার চরবাগ্যা গ্রামের আবুল কালামের বাড়ির বসতঘর থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত সামছুন নাহার সুবর্ণা জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরবাগ্যা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো. রুবেল এর স্ত্রী এবং সদর উপজেলার কৃষ্ণরামপুর গ্রামের মো. নুর নবীর মেয়ে। মৃত্যুকালীন সময়ে নিহত সুবর্ণা এক সন্তানের জননী এবং ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
নিহতের বড় বোন ঝর্ণা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ৪ বছর আগে আমার আপন দেবর মো. রুবেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ছোট বোন সুবর্ণা। বিবাহের পর তারা দু’জনই চট্রগ্রামে চাকুরি করতো এবং সেখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছিল। বছর দুয়েক আগে সুবর্ণার স্বামী রুবেল একটি মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়লে তাদের পরিবারে কলহ সৃষ্টি হয়। ওই সময় থেকে স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় সুবর্ণার ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে রুবেল। এনিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েক বার শালিস বৈঠকের পরও রুবেলের অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে আদালতে আইনের আশ্রয় নেয় সুবর্ণা। পরবর্তীতে আদালতে স্ত্রীর ওপর আর কোন নির্যাতন না করার অঙ্গিকার করে সুখে-শান্তিতে সংসার করার আশ^াস দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করায় রুবেল।
ঝর্ণা আক্তার আরো বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তে সুবর্ণা পুনরায় রুবেলের সংসার শুরু করলেও বন্ধ হয়নি রুবেলের পরকীয়া প্রেম। এই নিয়ে প্রতিবাদ করলে রুবেল, তার মা সহিদা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা সুবর্ণার ওপর অহেতুক নির্যাতন শুরু করে। শুক্রবার বিকালে সুর্বণা বাবার বাড়িতে দুইদিনের জন্য বেড়াতে আসার প্রস্তাব দিলে স্বামী রুবেল সুবর্ণার সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্বামী রুবেল, শাশুড়ি ও ছোট ভাই মিলে সুর্বণাকে বেদম পিটাতে থাকে। সুর্বণা বিষয়টি মুঠোফোনে আমাকে (বড় বোন ঝর্ণাকে) জানায়। এর একঘন্টা পর বিকাল ৫টার দিকে আমাদেরকে জানানো হয় সুবর্ণা গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অথচ আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি সুবর্ণার মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে। তাঁর সারা শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের বাবা মো. নুর নবী বলেন, আমার মেয়েকে তারা বেঁচে থাকতে দেয়নি। বিয়ের পর মেয়ে সুখে থাকলেও স্বামী পরকীয়ায় যুক্ত হওয়ার পর তাকে বাঁধা দেওয়ার কারণে সে আমার মেয়েকে নির্যাতন শুরু করে এবং সংসার করবে না বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মেয়ে একটি সন্তান এবং আরেকটি অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে সংসার করতে তার নির্যাতন সহ্য করেও পড়ে ছিল। অথচ শেষ পর্যন্ত রুবেল এবং তার পরিবারের সদস্যরা আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই, রুবেল ও তার মা-ভাইয়ের ফাঁসি চাই।
এদিকে অভিযুক্ত মো. রুবেল এর মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করলেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে প্রাথমিক অনসন্ধানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডিআই/এসকে