গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন ধরে সকাল ৮টায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদাহ মহাসড়কের চৌড়হাস এলাকায় বৈষ্যম্যবিরোধী শ্রমিক আন্দোলনের ব্যানারে বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো কারখানা ঘেরাও করে শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ২০১২ থেকে কোম্পানির পাওনা মুনাফা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, এক ও অভিন্ন নিয়োগপত্র, আইন বহির্ভূতভাবে ছাঁটাই করা শ্রমিকদের চাকরিতে পুর্নবহালসহ ২২ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
বিএটির শ্রমিক অসন্তোষ দূরীকরণে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার নির্ধারিত সময় মঙ্গলবার পার হয়েছে জানিয়ে মৌসুমী শ্রমিক শাহীন আহমেদ বলেন, এর আগে এই প্রতিষ্ঠানে যেসব শ্রমিক কাজ করেছে, শ্রম আইন ও বিধিমতে তাদের জন্য সব পাওনাদি নিশ্চিত করলেও এখন আর সেটা মানছে না কর্তৃপক্ষ। একটা স্বাধীন দেশের ভূখণ্ডে কারখানা পরিচালনা করবেন আর দেশের আইন-কানুন ও সরকারি নিয়মনীতি মানবেন না, সেটা কী করে হয়। শ্রমিকদের ভালো-মন্দ, ন্যায্য অধিকার দেখার জন্য এখানে যে সিবিএ সংগঠন রয়েছে। কিন্তু এর নেতারা এখন মালিকপক্ষের পা-চাটা দালাল হয়ে গেছেন। আমরা বাঁচলাম না মরলাম তাতে ওইসব দালাল সিবিএ নেতাদের কিছু যায় আসে না, হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখব, সাধারণ শ্রমিকের স্বার্থ না দেখে, মালিকের দালালি করে কয়দিন তারা নেতাগিরি করতে পারে। এ বিষয়ে বিএটি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও হিস্যা আদায়ের সংগঠন সিবিএ সভাপতি মোমিনুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বলেন, কর্মবিরতি দিয়ে শ্রমিকদের মানববন্ধনের বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই। আমি এখন একটা মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলব বলেই লাইন কেটে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিএটি কুষ্টিয়া কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মো. আব্দুল মুকিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে কারখানার ভিতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতেও দেওয়া হয়নি। তবে ফটকের ভেতর থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। যা জানার সেখান থেকেই জেনে নিতে হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অফিসের শ্রম পরিদর্শক মুনছুর বিল্লাল বলেন, গত বছর অক্টোবরে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমন্বিত সভা থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে শ্রমিক অসন্তোষ দূরীকরণে বিএটিকে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, কর্তৃপক্ষ সেটা না মানার কারণেই আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগপত্র না দেওয়া, বিনা কারণে শ্রমিক ছাঁটাই, বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ, ঝুঁকি ভাতাসহ অন্তত ২২ দফা সুপারিশ মেনে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে তখন সময় দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, এসব মীমাংসিত বিষয় বাস্তবায়ন করে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ করে পত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আদৌ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না তা আমাদের জানায়নি। এভাবে চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের আইনগত পথেই এগুতে হতে পারে।