
চলতি বছরে হজ করতে ৮৭ হাজর ১০০ হাজী মক্কায় যাবেন বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার।
তবে রুট ইনিশিয়াটিভ এর মাধ্যমে যে ৮৭ হাজার হাজী মক্কায় যাচ্ছেন তারা সবাই ঝামেলা বিহীন ইমিগ্রেশন ক্রস ও নির্দিষ্ট স্থানে লাগেজ পৌঁছানোর সুবিধা পাবেন না বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে গমনকারী ৭৭ হাজার ১০০ হজ যাত্রী এই সুবিধার আওতায় পরবে। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে গমনকারী বাকী ১০ হাজার যাত্রী এই সুবিধার আওতায় পরবে না।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ থেকে গমনকারী হজযাত্রীদের পরিষেবা প্রদানের সুবিধার্থে’ সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলেের সাথে বৈঠক শেষে এসব জানান তিনি।
মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার বলেন, সৌদি আরব থেকে গতকাল একটা প্রতিনিধি দল এসেছে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সাথে একটা দ্বিপাক্ষিক সভা করেছে। সভাতে যে বিষয়টা আলোচনা হয়েছে সেটা হলো আমাদের দেশ থেকে যেসব হাজীরা যায় তাদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ফ্যসিলেটেড করা। যাতে তাদের গমনাগমন সুগম হয় এবং হ্যাচেল ফ্রি ভাবে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাজীরা যে দুইটা ক্ষেত্রে সুবিধা পাই তার একটা হলো, হাজীরা সৌদি আরবে পৌঁছানোর পরে সৌদি বিমানবন্দরের যে ইমিগ্রেশনটা হওয়ার কথা সেই ইমিগ্রেশনের ফ্যাসিলিটি টা বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে ডিপার্ট হওয়ার আগেই এই সৌদি ইমিগ্রেশনটা হয়ে যায়। আরেকটা হল হাজীদের যে লাগেজ ম্যানেজমেন্ট এটা একটা স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে লাগেজ গুলোকে হ্যান্ডেল করে। লাগেজটা আমাদের এখানে হাজী ক্যাম্পের মাধ্যমে যে হস্তান্তর হয় এই লাগে একটা তারা হ্যান্ডওভার করে তাদের ডেস্টিনেসনে অর্থাৎ আমাদের হাজীরা যে হোটেলে ওঠেন সেই হোটেলে তারা পৌঁছে দেন। বেসিকালি এই দুইটা সুবিধা মক্কা রুট ইনিশিয়াটিভ এর মাধ্যমে আমাদের হাজীরা পেয়ে থাকেন। এরকম আরো কয়েকটি দেশের সাথে মক্কা রুট ইনিশিয়াটিভ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং তাদেরকেও এই ফ্যাসিলিটিটা (সুবিধা) দিয়ে থাকেন।
পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আজকে আমাদের এখানে তারা এই বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু এজেন্ডা দিয়েছিলেন। এই এজেন্ডা অনুযায়ী আমাদের আলোচনা হয়েছে। সকালে তারা আমাদের এয়ারপোর্টের মধ্যে যে লাউঞ্জটা ব্যবহার করে আমাদের হাজীরা যায় সেটা তারা দেখতে গিয়েছেন। সেখানে গিয়েও তারা বেশকিছু বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে আসার পর আমরা আমাদের ফরমাল যে মিটিং সেখানে বসি। মিটিংয়ে তারা আমাদের কিছু এজেন্ডা পাঠিয়েছিলেন। এজেন্ডাগুলো হাজীদের কিভাবে ফ্যসিলেটেড করা যায় সেই বিষয়ে।
এই ফ্যাসিলিটিটা যেহেতু তারা আমাদেরকে দেয় সেহেতু এই ফ্যসিলিটিটা এক্সিকিউট করার জন্য সৌদির কিছু ওয়ার্কফোর্স আমাদের এখানে থাকে। তারা কবে আসবেন কি কি সুযোগ সুবিধা আমাদের দিতে হবে এসব বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিবারের মতন আমাদের হাজীরা ইমিগ্রেশন ক্রস করে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে ঝামেলা বিহীন তাদের লাগেজটা তাদের কাছে পৌঁছাবে। আশাকরি আমাদের হাজীরা বরাবরের মতন এবারও নির্ভেজাল ভাবে হজে গমনাগমন করতে পারবেন।
রুট ইনিশিয়াটিভ এর মাধ্যমে যে ৮৭ হাজার হাজী মক্কায় যাচ্ছেন তারা সবাই এই সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অনেক হজ যাত্রীর অভিযোগ থাকে সঠিক স্থানে লাগেজটি পৌঁছায় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের হাজীর সংখ্যা ৮৭হাজার ১০০। এর মধ্যে ১০ হাজার হাজী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যাবে না। এই বিমানবন্দর হয়ে যাবে ৭৭ হাজার ১০০। যারা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে যাবে তারা মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ এর আওতায় পরবে। অন্যন্য বিমানবন্দর থেকে যে ১০ হাজার হাজী যাবে তারা এই সুবিধার আওতায় পরবে না। তবে তারা (প্রতিনিধি দল) এটি নিয়ে একটা কনসার্ন জানিয়েছে যে আমরা যদি তাদের এই বিষয়টি বুঝিয়ে এটার আওতায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে তারা বেনিফিটেড হবে। আমাদের কোন কোন৷ হাজীরা তাদের হোম টাউন থেকেই ফ্লাইটে উঠতে চাই এটাতেই তারা সুবিধা মনে করে। আমরা ভবিষ্যতে অ্যওয়ারনেসের মাধ্যমে তাদের এই রুট ইনিশিয়েটিভ এর মাধ্যমে আনতে পারি তাহলে তারা এই সুযোগ সুবিধাটা পেতে পারে।
লাগেজের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর ৮৫ হাজার গাজী হজে গিয়েছেন এর মধ্যে ১০০ এর মতন কিছু লাগেজ নিয়েে একটু সমস্যা হয়েছে। এটা নিয়ে তারা দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং এই বিষয়টি তারা এবার খেয়াল রাখবে বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু পয়েন্টও তারা তুলে ধরেছেন। সেটা আমাদের কিছু সমস্যা আছে বলে মনে করি এই বিষয়টি আমরাও দেখার চেষ্টা করবো।
ভিসা জটিলতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, ভিসার কোন সমস্যা ছিল না, এটা ছিল মূলত বাড়ি ভাড়ার সমস্যা। বাড়ি ভাড়া না হলে কেউ ভিসার আবেদন করতে পারে না। আজকে সকাল পর্যন্ত আমাদের শতভাগ হজ যাত্রীর বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, লাগেজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য আমরা দুইটা প্রস্তাব দিয়েছি। তারা একটি অলরেডি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন। আমরা লাগেজের সাথে একটি ট্যাগ লাগিয়ে দিবো। বিভিন্ন জায়গা স্কানার হয়ে লাগেজটি যাবে। ফলে কোন লাগেজ হারালে বা ডিসপ্লেস হলে কোথা থেকে হলো সেটা বোঝা যাবে এবং উদ্ধার করা সহজ হবে। এই লাগেজ হারানো বা ডিসপ্লেস হওয়ার বিষটি যাতে কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা বলেছি মক্কা এবং মদিনায় তারা যেনো অন্তত দুইটা ড্রপিং পয়েন্ট তারা দেয়।
ডিআই/এসকে