ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড, ৫ শিক্ষককে জরিমানা
বোয়ালখালীতে বিনয়বাঁশী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা পরিদর্শন
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা পৌর বিএনপির যৌথ সভা
উলিপুরে ব্রীজের পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দিয়ে মাটি ভরাটের অভিযোগ
পলাশবা‌ড়ি‌তে আন্ডার পাসের দাবী‌তে সমা‌বেশ অনু‌ষ্ঠিত
পিরোজপুরে চোরাই ইজিবাইকসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য গ্রেফতার
কালীগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে হত্যা,আটক ১
চাপাতি ঠেকিয়ে তরুণীর সোনার চেইন ও ব্যাগ ছিনতাই, ভিডিও ভাইরাল
ট্রেনে পুলিশ সদস্যের অশালীন অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ভাইরাল, যা বলল পুলিশ
ব্যারিস্টার সারোয়ারের বক্তব্যে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নিন্দা ও প্রতিবাদ
মুজিবনগর দিবসে আনসার বাহিনীর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ
১৮ হাজার টাকার মধ্যে পানিরোধী স্মার্টফোন সি৭৫এক্স আনল রিয়েলমি
পাঁচবিবি প্রেসক্লাবের সম্পাদক সাংবাদিক আবু হাসান আর নেই
কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি
কাঁঠালিয়ায় বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

সন্ত্রাসে মদতদাতা শরিফ-তাবরেজের উস্কানিতে পুলিশের ওপর হামলা,সেনা হস্তক্ষেপে আটক ৪

রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় ত্রিভুজ প্রেমকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষ,পুলিশ আক্রান্ত হওয়া এবং থানা ঘেরাওয়ের মতো নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। সংঘটিত সহিংসতার জেরে প্রেমিক-প্রেমিকা সহ চারজনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক যুবক তার প্রাক্তন প্রেমিকার ওপর জোরপূর্বক শারীরিক আক্রমণের চেষ্টা চালায়। বাধা পেয়ে তরুণী তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি তার বর্তমান প্রেমিক ও ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ের কিছু চিহ্নিত ব্যক্তিকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে পুরনো প্রেমিককে প্রকাশ্যে বেধড়ক মারধর করে। তার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সমন্বয়করা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, “এটা আমাদের ব্যাপার, আপনি চলে যান।” পুলিশ সদস্য মানিব্যাগ ও মোবাইল ফেরত দিতে বললে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের শুরু হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে এগিয়ে এলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য টুটুলকেও মারধরের শিকার হতে হয়।

টুটুল বলেন, “চার-পাঁচজন মিলে একজনকে মারছিল। আমি বললাম, ‘এটা কেন করছ?’ তখনই তারা ছাত্রলীগের ত্যাগ লাগিয়ে আমাকে চিহ্নিত করে মারধর শুরু করে। পুলিশ তখন নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।”

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় যখন পুলিশের উপস্থিতিতেই সমন্বয়করা আগ্রাসী আচরণ করে এবং লাঠিসোটা নিয়ে অতিরিক্ত জনতা হামলায় যোগ দেয়। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে চারজনকে আটক করে।

থানায় ফের অরাজকতা

রাত সাড়ে ১১টার দিকে রূপনগর থানার চত্বরে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজিত সমন্নয়করা থানার প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করে।

মামলা নিয়ে নাটক ও পক্ষপাতের অভিযোগ

প্রথমে বিএনপি নেতারা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিলেও পরে সমন্বয়ক পক্ষ থেকেই মামলা দায়ের করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই সময় প্রেমিকা ও তার নতুন প্রেমিক পুলিশের ওসির কক্ষে আরামদায়ক অবস্থায় সময় কাটাচ্ছিলেন।

রাত ৩টার দিকে সাংবাদিকরা থানায় উপস্থিত হলে প্রেমিক-প্রেমিকা থানাছাড়া হতে চায়, কিন্তু সমন্বয়করা তাদের ফিরিয়ে আনে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তারা বিব্রত হয়ে নীরব থাকে।

রাত ৩টা ২০ মিনিটে মাহিম নামক এক সমন্বয়ক যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ২০ জন নেতার নাম উল্লেখ করে এবং ৩০-৪০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ইতোমধ্যে দুইজনকে আটক করেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কড়া ভাষা

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে, পুরো পরিস্থিতির মূল চক্রে রয়েছেন রূপনগর থানা যুবলীগের কুখ্যাত নেতা ও ছাত্র হত্যা মামলার পলাতক আসামি শরিফ মাতবর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিয়ালবাড়ী এলাকার বস্তি নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস-বিদ্যুতের চোরাচালান ও স্থানীয় সন্ত্রাস চক্র পরিচালনা করে আসছেন। এ সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে অর্জিত অর্থের মাধ্যমে তিনি যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।

তার সহচর তাবরেজ, যিনি এক সময় ছাত্রলীগ কর্মী এবং পরবর্তীতে বিমান সংস্থার ক্রু ছিলেন, মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে চাকরিচ্যুত হন। বর্তমানে তিনি ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছেন।

প্রেম-সম্পর্কিত একটি সাধারণ ঘটনা শরিফ-তাবরেজ জুটি পরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় রূপান্তর করে। এর ফলেই পুলিশ আক্রান্ত হয়, সেনাবাহিনীকে বারবার টহল দিতে হয় এবং গোটা রাত জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সড়কে অবস্থান করতে হয়।

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোকাম্মেল হক বলেন, “খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ পাঠানো হয়। তবে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে পড়ায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পুরো বিবরণ আগামীকাল জানানো হবে।”

রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার ছায়া

এই ঘটনার জেরে রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশ্লেষক মহল মনে করছে, দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তা আরও ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ