ঢাকা, সোমবার, ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ৯ চোরাচালান শ্রমিককে আটক করেছে বিজিবি
সরকারি জায়গায় প্রভাবশালীর ৬ পাকাস্থাপনা দোকান নির্মান, আংশিক উচ্ছেদ ভ্রাম্যমান আদালত
তানোরে শীষ মোহাম্মদের কবর জেয়ারত করলেন এমপি প্রার্থী সুলতানুল ইসলাম তারেক
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে:- চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত
পাঁচবিবিতে হাকিম মণ্ডলকে অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন
যাত্রাবাড়ীতে ১০৫০০ ইয়াবাসহ আটক ৪
ফের ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ের এডির দায়িত্বে মেহেদী হাসান
এসএমপি ও চাঁদপুরে অনলাইনে সকল ধরনের জিডি সেবা চালু: হেডকোয়ার্টার্স
কু‌ড়িগ্রা‌মে এক ব্যবসায়ীর আড়াই লাখ টাকা ছিনতাই‌য়ের অ‌ভি‌যোগ
মদনে ছাগলে ধান খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে কৃষক নিহত
আত্রাইয়ে বান্দাইখাড়া টেকনিক্যাল কলেজে গাজায় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ
বকশীগঞ্জে খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু
সন্ত্রাসী কবির-মুসার অন্যতম দুই সহযোগী গ্রেফতার
ঝিকরগাছায় ১৩ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টা, থানায় অভিযোগ দায়ের
বাগমারায় জমিজমা জবর দখল অপচেষ্টার অভিযোগ

ডালিয়ার ১৪ বিয়ে: প্রতারণা চলমান

গল্পটা সিনেমার নয়। তবে এ কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। টুঙ্গিপাড়ার কোটালীপাড়ার মেয়ে ডালিয়া। এই ডালিয়া কখনও নৃত্য শিল্পী, কখনো গায়িকা আবার কখনো তিনি প্রেমিকা। ফাঁদে ফেলে বিয়ে করাই তার পেশা। বিভিন্ন সময়ে নানান পেশার পুরুষকে বিয়ে করে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ। এ পর্যন্ত তার ১৪ জন স্বামীর সন্ধান পাওয়া গেছে।

ডালিয়া নিজেকে মডেল আর অভিনেত্রীর পরিচয় দেন। ইউটিউবার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। আসলে বিয়ে করাই তার নেশা ও পেশা। ডালিয়া কখনো আক্তার সাথী, কখনো ডালিয়া খানম, আবার কখনো মায়া নামে পরিচয় দেন। তার স্বামীর তালিকায় রয়েছেন র‌্যাব সদস্য, আনসার সদস্য, পুলিশ কনস্টেবল, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসীসহ আরও অনেকেই। ডালিয়ার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন প্রত্যেকেই। চাকরি হারিয়ে র‌্যাব সদস্য এখন মুদি দোকানি। আনসার সদস্য এখন অটোরিকশা চালক। প্রথম স্বামী ডালিয়ার নির্যাতন থেকে বাঁচতে দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি নিঃস্ব। দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র। তাদের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ডালিয়ার ১৪ টি বিয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কুশলা ইউনিয়নে বেড়ে উঠেছেন ডালিয়া। পড়েছেন মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। ডালিয়ার ছোট ভাই, তার তিনজন সাবেক স্বামী এবং বর্তমান স্বামী, বিয়ের কাজী, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ অনেকেই ডালিয়ার বেপরোয়া জীবন ও বিয়ে বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেছেন। তার বিয়ে বাণিজ্য এবং বেপরোয়া জীবনের যাবতীয় নথি উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একের পর এক বিয়ের পর স্বামীকে নির্যাতন শেষে দেনমোহরের টাকা নিয়ে দেন ডিভোর্স। এভাবেই ১৪ জন স্বামীর কাছ থেকে কথিত মডেল ডালিয়া হাতিয়েছেন কোটি টাকা।

ডালিয়া অসামাজিক অভিনয় করেন নাম সর্বস্ব কিছু ইউটিউব চ্যানেলে। এসব থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপরই খুলে বসেন বিয়ের দোকান। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ১৪ জনকে বিয়ের ফাঁদে ফেলেন ডালিয়া। তার প্রথম স্বামী সোহেল খান, বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার কোটালিপাড়ায়। দ্বিতীয় স্বামী হুমায়ুন তার বাড়িও টুঙ্গিপাড়ার কোটালিপাড়া। ৩ নম্বরে রয়েছে টাঙ্গাইলের সোহাগ। চতুর্থ রিপন মণ্ডল, ৫ম স্বামী হবিগঞ্জের আনসার সদস্য সুনির্মল বিশ্বাস, ৬ষ্ঠ খুলনার আমিরুল ইসলাম (র‌্যাবের সাবেক সার্জেন্ট), ৭ম কনস্টেবল মো. রাজু আহমেদ, ৮ম সিরাজগঞ্জের আব্দুল খালেক- মালয়েশিয়া প্রবাসী। ৯ম বরিশালের রেজাউল শেখ, ১০ম যাত্রাবাড়ীর শাহ আলম, ১১তম নরসিংদীর সৌদি প্রবাসী এনামুল, ১২ তম স্বামী ওমান প্রবাসী সাকিব,তবে এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত ১৩ ও ১৪ নাম্বার স্বামীর ঠিকানা জানা যায়নি।তার উদ্দেশ্য হচ্ছে,প্রতারণার মাধ্যমে ছেলেদেরকে বিয়ে করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করা। ইতিমধ্যেই সে অনেক ছেলেদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং এখনো তার প্রতারণা চলমান রয়েছে।

ডালিয়ার বিয়ে বাণিজ্যের এ ব্যাপারে তার আপন ছোট ভাই হাসিবুর শেখ বলেন, ‘আমার বোন ভালো না। তার সমস্যা আছে। তিনি আমাদের কথা শোনেন না। বেপরোয়া চলা-ফেরা করে। আমরা তার জন্য এলাকায় মুখ দেখাতে পারি না। তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট (র‌্যাব) চাকরিচ্যুত অফিসার আমিনুলের বাড়ি খুলনা শহর থেকে জেলখানা ফেরিঘাট ও রূপসা নদী পার হয়ে রূপসা থানার জুগিরহাট গ্রামে। চাকরি হারিয়ে এখন মুদি দোকানের মালিক তিনি। আমিনুল সেনাবাহিনী থেকে বদলি হয়ে আসেন র‌্যাব সদরদপ্তরে। তার অধীন আনসার সদস্য সুনির্মলকে বিয়ে করেন ডালিয়া। এ নিয়ে দেন ধর্ষণ মামলা। সেই মামলার রফাদফা করার দায়িত্ব পান তৎকালীন র‌্যাবের সার্জেন্ট আমিনুল। আর সেই বিচার করতে গিয়ে ডালিয়ার পাতা ফাঁদে পা দেন আমিনুল। এক সময় বিয়ে করতে বাধ্য হন ডালিয়াকে। এরপরই পুরনো কৌশলে হাতিয়ে নেন টাকা। করেন নারী নির্যাতন মামলা। সেই শোকেই মারা যান আমিনুলের বাবা।

ডালিয়ার ছোট ভাই হাসিবুর শেখ আমিনুল বলেন, ‘চাকরিরত থাকলে এখন আমি সার্জেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রমোশন পেতাম। কিন্তু ডালিয়ার ফাঁদে পড়ে আমার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। বিয়ের পর ডালিয়ার বাবাকে ব্যবসা করার জন্য ৮ লাখ টাকা দেন। বাসার আসবাবসহ অসংখ্য টাকা ব্যয় করেন। এই টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে একটি প্রতারণা ও অর্থ উদ্ধার মামলা চলমান রয়েছে। সেই মামলায় ডালিয়ার বাবা লিয়াকত ১ মাস জেল খেটেছেন।’

কুশলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ডালিয়ার এসব নোংরা কাণ্ডে বিব্রত এলাকার মানুষ। এই মহিলাটি আসলে ভালো না, নোংরা। তার কয়েকটি বিয়ে আছে এটা আমি জানি। আমার টেবিলেও অনেক অভিযোগ আছে।

ডালিয়া একজন পেশাদার প্রতারক। সে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ অর্থ অর্জন করেছে। সে তার এই প্রতারণা কাজে গত স্বৈরাচার সরকারের পুলিশের ডিআইজি হাবিব সহ আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের ব্যবহার করত। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় বাড়তি সুবিধা নিত সব জায়গা থেকে যাত্রা, মডেলিং এর নাম করে সে দেহব্যবসা করে যাচ্ছে। তার এসব কর্মকাণ্ডে অনেক ছেলে পথে বসে গেছে চাকরি হারিয়েছে, জেল খেটেছে, সংসার ভেংগে গেছে।

এবিষয়ে ডালিয়ার দাবি, তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন কিন্তু কোন স্বামীকে তালাক না দিয়ে নতুন করে বিয়ে করেননি।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ