ঢাকা, শনিবার, ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
আমতলীতে হুমকির বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ
ইসরায়েলি পন্য বয়কটের দাবিতে পল্লবী থানা যুবদলের বিক্ষোভ
কালিগঞ্জের লম্পট গৌরপদ মন্ডল গ্রেফতার
বিরামপুরে শ্রমিক দলের ঈদ পুনর্মিলনী
আত্রাইয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির ওপর হামলা গ্রেপ্তার-১
বোয়ালমারীতে গলায় ফাঁস নিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
ঝালকাঠিতে জলবায়ু যোদ্ধাদের গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক-র‍্যালি
বাকাশিবোর চেয়ারম্যান হওয়ায় শুভেচ্ছাও অভিনন্দন পেয়েছেন প্রকৌশলী রুহুল আমিন
বান্দরবানের কালাঘাটায় বিএনপির অফিস ভাংচুরের প্রতিবাদে-নাইক্ষ্যংছড়িতে বিক্ষোভ
রামপুরায় এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণের পর চাঁদা দাবী,উদ্ধারে পুলিশ
রূপসায় ফিলিস্তিনে নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
কালিগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুরে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলন ও মতবিনিময় সভা 
বঙ্গোপসাগরে ডাকাতের কবলে পড়া ফিশিং ট্রলারসহ ৬৭ জেলেকে উদ্ধার করলো কোস্ট গার্ড
দুই কিলোমিটার ধাওয়া করে ছিনতাইকারীকে ধরলো সেনাবাহিনী
নওগাঁয় পরকীয়ার বলি সন্ধ্যা কে ফিরে পেতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

বেতাগীর ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যস্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক ‘খাইরুল ইসলাম’

খাইরুল ইসলাম মুন্না বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:

জন্মগতভাবে অন্ধ তিনি। চলাফেরা করেন সাদাছড়ি নিয়ে। তাই বলে কোনো কিছুতে পিছিয়ে নেই, বরং সবকিছুতেই অগ্রগামী। চোখে দেখতে পান না বলে কোনো দুঃখ নেই। দারুণ মনোবল আর ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে হয়েছেন মানুষ গড়ার কারিগর। ৯ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। বরগুনা জেলার বিষখালী নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা উপকূলীয় জনপদ বেতাগী উপজেলার ২৪ নং দক্ষিণ ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলামের কথা। দক্ষিণ ভোলানাথপুর গ্রামের বাসিন্দা খাইরুলের বাবা মোহাম্মদ সিকদার পেশায় কৃষক। মা হাজেরা বেগম গৃহিণী। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট খাইরুল জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ভাই-বোনের কেউ এসএসসির পর লেখাপড়া করেনি। কিন্তু অদম্য খাইরুল দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে বরিশাল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সরকারি বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম, নূরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সৈয়দ সরকারি হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএসএস এবং বরগুনার লাল মিয়া টিচার্স টেনিং কলেজ থেকে বিএড সম্পন্ন করেন। এরপর যোগ দেন দক্ষিণ ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
খাইরুলের কর্মস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে বই ছুঁয়ে, কখনও হাত উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করছেন।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী শান্তা বলে, স্যার চোখে না দেখলেও আমাদের পড়াচ্ছে। তিনি খুব সুন্দরভাবে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ান।
ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ভবরঞ্জন সিকদার বলেন, খাইরুল অন্য শিক্ষকদের তুলনায় দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে পাঠ দান করেন। তার এই অদম্য চেষ্টা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
আজীবন সংগ্রামী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এভাবে জন্ম নেওয়ায় আমার কোনো হাত নেই। আল্লাহই আমাকে এভাবে পাঠিয়েছেন। আমি এটাকে তার নেয়ামত মনে করেছি। সবার দোয়া ও সহযোগিতায় সত্যিকারের মানুষ গড়ার কাজ করে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।’
খাইরুলের বাবা মোহাম্মদ সিকদার বলেন, আমার সংসারে অভাব ছিল। কিন্তু খাইরুলের লেখাপড়ার আগ্রহের কারণে কষ্ট করে হলেও তাকে পড়িয়েছি। আমার ছেলে চোখে না দেখেও যখন ক্লাসে ছাত্রদের পড়ায় তখন বাবা হয়ে সব কষ্ট ভুলে যাই। গর্বে বুক ভরে ওঠে। শারীরিক অক্ষমতার কারণে আটকে থাকেনি তার দাম্পত্যজীবন। ২০১৮ সালে সালমা আকতারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। আছে তিন বছরের একটি কন্যাসন্তান। নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হলেও কর্মস্থলে আছে বেশকিছু সংকট। আছে বিশেষ পদ্ধতির বইয়ের অভাব। শিক্ষা অফিস থেকে শিশুদের পড়ানোর জন্য তাকে এ পর্যন্ত কোনো বই সরবরাহ করা হয়নি। তাই নিজস্ব উদ্যোগে বরিশালে গিয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে পুরোনো বই সংগ্রহের মাধ্যমে শিশুশ্রেণিতে পড়াচ্ছেন।
পাশাপাশি ক্লাসরুমগুলোও প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য নেই কোনো র্যাম্প। নিয়মিত হেঁটে সঙ্গে সহযোগী নিয়ে স্কুল করেন। বাড়িতে থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটি খুবই চলাচল অনুপোযোগী। এমনিতেই রাস্তায় সক্ষম মানুষের যাতায়াতে সমস্যা, সেখানে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতে তাকে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। কখনও ঘটে দুর্ঘটনা। বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষক খাইরুল অত্যন্ত প্রতিভাদীপ্ত। তিনি গোটা শিক্ষক সমাজের গর্ব ও এগিয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। পাঠদানের ক্ষেত্রে তার বইয়ের সংকট থাকলেও কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ পদ্ধতির বইয়ের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমদ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও শিক্ষক খাইরুল সমাজের দৃষ্টান্ত। কোনো প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। নিজে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তেমনি সমাজ গড়ার কাজেও রাখছেন অবদান। অনেকের কাছেই তিনি অনুপ্রেরণা। তার প্রতি আমাদের সহযোগিতার হাত সর্বদা প্রসারিত থাকবে।

শেয়ার করুনঃ