ঢাকা, বুধবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার নৌপথ ও সুন্দরবনের নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা সভা
ঘোড়াঘাট উপজেলার বির্স্তৃণ মাঠ এখন সবুজের সমারোহ
নিকলীতে নিরীহ পরিবারকে একঘরে করার প্রতিবাদে নাগরিক ফোরামের স্মারক লিপি
ঘোড়াঘাটে গরু ব্যবসায়ীর বাড়িতে গরু চুরি
পটুয়াখালীর জৈনকাঠী ইউনিয়নে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর নতুন ডিলারদের চাল বিতরণ
শিক্ষক মেলবন্ধন ২০২৫’ এ শিক্ষক সম্মাননা পেলেন ক্যামব্রিয়ান কলেজের নাজমুল হুদা
প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি লামা-আলীকদমের কাঠ ব্যবসায়ী
নড়াইলের বন-খলিশাখালী দাড়ার মাইক্রো ওয়াটারসেড (খাল) পূনঃখনন কাজের উদ্বোধন
সীতাকুণ্ড – সন্দ্বীপ রুটে ফেরি চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় জমিজমা বিরোধের জেরে বৃদ্ধ মা’কে পেটালেন ছেলে
সালথায় দেশীয় এলজিসহ শর্টগানের ২টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার
গাঁজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ফরিদপুরে এনজিও প্রতিষ্ঠানের মানববন্ধন
বকশীগঞ্জ নিহত রিপন মিয়ার লাশ উত্তোলনে বাঁধা, ফিরে গেলেন ম্যাজিস্ট্রেট
উল্লাপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে ইয়াবাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার
আমতলীতে শিশু সুরক্ষা বিষয়ক মতবিনময় সভা

প্রায় বিলুপ্তির পথে এই হ্যাজাক লাইট

স্টাফ রিপোর্টার:

আগের দিনগুলোতে প্রত‍্যন্ত গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে দেখা যেত এক আধটা হ‍্যাজাক লাইট। বাড়িতে ছোট্ট-বড় কোন অনুষ্ঠান হলে সকালবেলায় শুরু হত ঝাড়পোঁছ। তারপর সন্ধাবেলায় তাকে জ্বালানোর প্রস্তুতি। যে কেউ এই বস্তু জ্বালাতে পারতো না। সেরকম বিশেষ ব‍্যক্তিকে সেদিন পরম সমাদরে ডেকে আনা হতো। সেদিন তাঁর চাল-চলন থাকতো বেশ ডেমাকি।বাড়ির কচি-কাচারা হ‍্যাজাক প্রজ্জ্বলনকে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বসত। এরপর তিনি হ‍্যাজাকে তেল আছে কিনা পরীক্ষা করে নিয়ে শুরু করতেন পাম্প করা। একবার একটা পিন দিয়ে বিশেষ পয়েন্টে খোঁচাখুঁচি করা হত। তারপর একটা হ‍্যাজাকের নব ঘুরিয়ে কিছু জ্বলন্ত কাগজ তার সংস্পর্শে আনতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠত। তখন শুরু হত আচ্ছা করে পাম্প দেওয়া। ক্রমেই হ‍্যাজাকের মাঝখানের ম‍্যান্টল থেকে বেশ উজ্জ্বল আলো বেরনো শুরু হত। সেই সঙ্গে একটা বুক কাপঁন ধরানো হি……..স আওয়াজ হত। আবার মাঝে মাঝে হ‍্যাজাকের ওপর দিয়ে দুম করে আগুন জ্বলে উঠত। আবার কখনও বা গোটাটাই নিভিয়ে যেত। সফলভাবে হ‍্যাজাক জ্বালানোর পর সেই ব‍্যক্তির মুখে ফুটে উঠত এক পরিতৃপ্তির হাসি। আর হ‍্যাজাকের সেই উজ্জ্বল জাদুর আলোয় কচি-কাচারা চলে যেত এক আনন্দের জগতে। গ্রামবাংলা থেকে ত্রুমেই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীনতম আলোর সরঞ্জাম হ্যাজাক লাইট।

বিয়ে, পূজা-পার্বণ, যাত্রাপালা, এমন কি ধর্ম সভায়ও ভাড়া দেওয়া হত এই হ্যাজাক লাইট। হ্যাজাক দেখতে অনেকটা হ্যারিকেনের মতোই কিন্তু আকারে বেশ বড়। আর প্রযুক্তিও ভিন্ন রকম। জ্বলে পাম্প করে চালানো সাদা কেরোসিনের কুকারের মতো একই প্রযুক্তিতে। চুলার বার্নারের বদলে এতে আছে ঝুলন্ত একটা সলতে। যেটা দেখতে প্রায় ১০০ ওয়াটের সাদা টাংস্টেন বাল্বের মতো। এটি অ্যাজবেস্টরে তৈরি। এটা পুড়ে ছাঁই হয়ে যায় না। পাম্প করা তেল একটা নলের ভিতর দিয়ে গিয়ে স্প্রে করে ভিজিয়ে দেয় সলতেটা। এটা জ্বলতে থাকে চেম্বারে যতক্ষণ তেল আর হাওয়ার চাপ থাকে ততক্ষণ। তেলের চেম্বারের চারিদিকে থাকে চারটি বোতাম। একটি পাম্পার। একটি অ্যাকশন রড। একটি হাওয়ার চাবি। আর একটি অটো লাইটার বা ম্যাচ। অ্যাকশন রডের কাজ হচ্ছে তেল বের হওয়ার মুখটা পরিষ্কার রাখা। হাওয়ার চাবি দিয়ে পাম্পারে পাম্প করা বাতাসের চাপ কমানো বা বাড়ানো হয়। একবার হাওয়া দিলে জ্বলতে থাকে কয়েক ঘন্টা আর দেড় লিটার তেল জ্বলে সারা রাত ধরে। বর্ষার শুরতে এবং শীতের শুরুতেই যখন নদীনালায় পানি কমতে থাকে তখন রাতের বেলায় হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে অনেকে মাছ শিকার করে। তবে এটা চলে বছরে মাত্র মাস দুয়েক। বাতি এক প্রকার সরঞ্জাম। বাতির ব্যবহার অতি প্রাচীন । সাধারণত বাতি বলতে বুঝায় কুপি, টর্চ লাইট, হ্যারিকেন ও হ্যাজাক। বাতি হল সেই সরঞ্জাম যা অন্ধাকার দূর করতে ব্যবহার করা হয়।

প্রাচীনকালে আগুনের ব্যবহারের মাধ্যমে বাতির প্রচলন হয়। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সবখানেই। ফিলামেন্ট বাতির বদলে এলইডি বাতির চলও নতুন নয়। তবে এলইডির সঙ্গেও এখন যুক্ত হয়েছে নানা রকম প্রযুক্তির বাতিও হয়েছে স্মার্ট। বাজার ঘুরে জানানো হচ্ছে বাসা-বাড়ি, অফিস, কারখানার নানারকম বাতির খোঁজ। ২০ বছর আগে হ্যাজাকের ব্যবহার যতেষ্টো ছিল। তখন হ্যাজাক লাইট ঠিক করে আয় ভাল হত। দিনে ৪-৫টি করে মেরামত করে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতো মেরামত কারীরা। কিন্তু বর্তমানে হ্যাজাক লাইট নেই বললেই চলে। তাই এখন পেশা পরিবর্তন করেছে।হ্যাজাক লাইট বানানোর কাজ হচ্ছে তেল সাপলাই দেওয়া পিন তেল বন্ধ করা এবং খোলা, মাটির ছিদ্র, ভেপার: তেল সাপলাই দিয়ে ম্যান্ডলে দেয়, ম্যাকজিনে ম্যান্ডল বাধা হয়, ম্যাকজিন তেল সাপলাই দেয়, চেমি/কাইচের কাজ হচ্ছে আলো বৃদ্ধি করা এবং হাড়িতে তেল ধরে দেড় কেজি। এই তেল দিয়ে প্রায় সারা রাত চলে যায়। ১২৫ টাকা করে ভাড়া দেওয়া হত প্রায় ৪০ বছর আগে। গ্রামে বিদ‍্যুৎ চলে আসার পর থেকে হ‍্যাজাকের কদর তেমনটা নেই। এভাবে কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে একসময়ের জনপ্রিয় প্রাচীনতম আলোর উৎস হ্যাজাক লাইট।

শেয়ার করুনঃ