
গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল ২৪নং সেক্টরে স্ত্রীকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামী উবার চালক মিজানুর রহমান সুমনকে (২৮) গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
র্যাব জানায়,পাষণ্ড সুমনের একজন মেয়ে ও স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও দেড় বছর আগে বিলকিচকে বিয়ে করে একটি ভাড়া বাড়িতে রাখে। কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে বিগত কয়েকমাস ধরে ২য় স্ত্রীর আর্থিক চাহিদা পূরনে ব্যর্থ হয়ে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৯ মে পূর্বাচলে ঘুরতে নিয়ে তার শরীরে প্রেক্ট্রল দিয়ে আগুন দেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিলকিচের মৃত্যু হয়।
বুধবার (২২ মে ) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
তিনি বলেন,সুমনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মুরাদ নগরে হলেও প্রথম স্ত্রী শিমু ও দেড় বছরের ছোট মেয়ে এবং মাসহ তুরাগ থানার রানাভোলা নামক স্থানে ভাড়াটে হিসাবে বসবাস করতেন। আনুমানিক দেড়/দু’বছর পূর্বে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার বিলকিস (২৬)’কে তার অভিভাবকের অগোচরে বিয়ে করেন এবং রানাভোলা থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া নামক স্থানে অন্য একটি বাসা ভাড়া করে রাখেন।
উবারে গাড়ী চালনা করে স্বল্প আয়ে তাকে দুটি সংসার চালানোর দায়িত্ব নিতে হয়। গত তিন/চার মাস যাবৎ দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস তার নিকট একটু বেশী টাকা দাবি করা শুরু করে ফলে উভয়ের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। এক পর্যায়ে হত্যাকারী সুমন তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। মাঝে মধ্যে সে বিলকিস কে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেতেন এবং সুযোগ খুঁজতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান,ভিকটিম বিলকিচকে হত্যার উদ্দেশ্যে গত ১৯ মে দুপুরের পর সে (সুমন) তাঁর স্ত্রী বিলকিস কে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যায়।
পথি মধ্যে চা পান করে এবং জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বিকাল আনুমানিক ৪ টার পর ২৪ নং সেক্টরে একটি জঙ্গল এলাকায় নিয়ে যান। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি দেখে সেখানে গাড়ী থামান। বিলকিস গাড়ীতে বসে থাকে এবং আসামী সুমন গাড়ী হতে বের হয়ে পাইপ দিয়ে পেট্রোল বের করে একটি বোতলে ভরে। গাড়িটি তখনো স্টার্ট অবস্থায় ছিল। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে বের হয়। তৎক্ষনাৎ সে (সুমন) বোতলের পেট্রোল বিলকিস এর গায়ে ছিটিয়ে দেয় এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে দ্রুত গায়ে ছুঁড়ে মারে। আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। বিলকিস বাঁচার জন্য জোরে জোরে চিৎকার শুরু করে।
এরপর হত্যাকারী সুমন গাড়ি নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে। বিলকিসের ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন ছুটে আসে এবং বিলকিস কে একটি ড্রেনের মধ্য হতে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে শেখ হাসিনা বার্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ২০ মে সকাল ৯ টায় অসহ্য পোড়াযন্ত্রনা নিয়ে ভিকটিম মারা যায়।
ঘটনার পর সুমন আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডের আসামী’কে আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব-১ এর আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামী গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে বিকাল ৬ টার সময় গাজীপুর জেলার বাসন থানায় অভিযান চালিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ এর একটি দল।
এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডিআই/এসকে