ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড, ৫ শিক্ষককে জরিমানা
বোয়ালখালীতে বিনয়বাঁশী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা পরিদর্শন
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা পৌর বিএনপির যৌথ সভা
উলিপুরে ব্রীজের পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দিয়ে মাটি ভরাটের অভিযোগ
পলাশবা‌ড়ি‌তে আন্ডার পাসের দাবী‌তে সমা‌বেশ অনু‌ষ্ঠিত
পিরোজপুরে চোরাই ইজিবাইকসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য গ্রেফতার
কালীগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে হত্যা,আটক ১
চাপাতি ঠেকিয়ে তরুণীর সোনার চেইন ও ব্যাগ ছিনতাই, ভিডিও ভাইরাল
ট্রেনে পুলিশ সদস্যের অশালীন অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ভাইরাল, যা বলল পুলিশ
ব্যারিস্টার সারোয়ারের বক্তব্যে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নিন্দা ও প্রতিবাদ
মুজিবনগর দিবসে আনসার বাহিনীর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ
১৮ হাজার টাকার মধ্যে পানিরোধী স্মার্টফোন সি৭৫এক্স আনল রিয়েলমি
পাঁচবিবি প্রেসক্লাবের সম্পাদক সাংবাদিক আবু হাসান আর নেই
কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি
কাঁঠালিয়ায় বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

অসীম পরিবহনের ছাত্রদলের সাবেক নেতা নেতৃত্বে আগুন,প্রাণ যায় ঘুমন্ত নাঈমের;সিটিটিসি

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় মহাসমাবেশের নামে নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এই আন্দোলন সফল করতে বাস,ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ শুরু করে আন্দলোনকারীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে ডেমরা এলাকা অছিম পরিবহনে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত পরিবহন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ( সিটিটিসি)’র স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের এন্টি ইললিগ্যাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিম।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-ছাত্রদল নেতা নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি (৩৭),নারায়নগঞ্জের যুবদল নেতা সাহেদ আহমেদ (৩৮) ও বিএনপি কর্মী মাহাবুবুর রহমান সোহাগ (৩৩)। সোহাগ মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক।

গাড়িতে আগুন দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

শনিবার ( ২৭ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো.আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন,২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বানচালের উদ্দেশ্যে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের নামে রমনায় প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মত জঘন্য কাজ সহ অসংখ্য গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর ভোরবেলায় ডেমরা থানাত দেইল্লা বাস স্ট্যান্ডে পার্কিং করে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। এতে ঐ বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেল্পার মো.নাইম (২২) ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যায় এবং অপর হেল্পার মো. রবিউল(২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়। এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করে সিটিটিসির স্পেশাল একশন গ্রুপের এন্টি ইলিগাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিম মামলা তদন্ত শুরু করে।

সিটিটিসি প্রধান বলেন,নিহত নাঈমের গ্রামের বাড়ি বরিশালের কোতয়ালি থানা এলাকায়। নিহত নাইমের বাবার নাম আলম চৌকিদার এবং মায়ের নাম পারভিন বেগম। তারা ডেমরা এলাকাতেই থাকতেন। অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা ফিরানোর জন্যই অল্প বয়সে কাজে নামেন নাঈম। দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বাসের ভিতর ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজের জীবন বিসর্জন দেন। অপর ভিক্টিমের নাম মো.রবিউল (২৫)। একই বাসে নাঈমের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল রবিউল। ঘুমের মাঝে আচমকা আগুনের তাপে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার রবিউলের। কিন্তু ততক্ষণে রবিউলের শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কোনমতে অগ্নিধগ্ধ অবস্থায় গাড়ি থেকে সে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় সে হসপিটালে ভর্তি হয়।

তদন্তভার গ্রহণের পড় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। উক্ত ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি সনাক্ত করতে সক্ষম হয় যা ঐদিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই গাড়ীর সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল অগ্নি সংযোগ কারী ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ীটি জব্দ করা হয়।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আসাদুজ্জামান আরও বলেন,২৮ শে অক্টোবরের নাশকতা ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সিকে নির্দেশনা দেয় দলের হাইকমান্ড। নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোন ঘটনা ঘটানো যাতে করে জনমনে ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেয় মনির। সে নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেয়। তারা দুজনে মিলে একটি পরিকল্পনা করে যেখানে তারা স্থির করে এমন একটি ঘটনা ঘটাবে যাতে জনমনে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ডেমরা এলাকার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাত ২ টার পর বেশ কয়েকবার গাড়ী দিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করে এবং দেখতে থাকে কোন জায়গাটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত। অবশেষে তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ফিক্স করে “বড়ভাঙ্গা” মার্কেটে চলে যায়। সেখান থেকে তারা ২ লিটারের পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করে রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছায়। নিরাপদ দূরত্বে গাড়ী থামিয়ে ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগকে গাড়িতে রেখে মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক কররে রাখা অছিম পরিবহনের গাড়ীর কাছে যায়। সেখানে একটি গাড়ীর ড্রাইভার সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে ড্রাইভার সিটে মনির মুন্সি পেট্রোল ঢেলে দেয় এবং একপর্যায়ে বোতল টি ও সেখানে ফেলে দেয়। তারপর দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দুইজন দৌড়ে পুনরায় গাড়িতে এসে উঠে। এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তারা এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য রং সাইডে ডেমরা এক্সপ্রেস ওয়েতে উঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন “মুন্সি পেট্রোল পাম্প” এ রাত্রি যাপন করে। সকাল ১০টায় বাসায় ফিরে যায়।

দলের পদের বিষয় তিনি বলেন,নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি (৩৭),ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি, সাহেদ আহমেদ (৩৮), নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব ও ছাত্রদলের
সাবেক সভাপতি এবং মাহাবুবুর রহমান সোহাগ (৩৩) বিএনপি কর্মী এবং মনির মুন্সির ব্যাক্তিগত ড্রাইভার।

নাশকতার নির্দেশদাতাদের পরিচয় জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন,আমরা সবার নাম পরিচয় পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাদের গ্রেফতার শেষে সবাইকে জানানো হবে।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ