
কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামান। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নিয়েছে হাজার হাজার আসল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি। পড়ালেখা ছাড়াই পাঁচ হাজার লোকের হাতে টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়েছে আসল সার্টিফিকেট। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও দেখা যায় সেসব সার্টিফিকেটের তথ্য। অবশেষে মুল হোতা শামসুজ্জামান ও তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ অবৈধ আসল সার্টিফিকের ও মার্কশিট তৈরির সরঞ্জাম।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ও আগারগাওয়ে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন,একদিকে মেধাবী ছাত্ররা কঠিন লেখাপড়া করেও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না অন্যদিকে সে (শামসুজ্জামান) তার বাসায় বসে ইচ্চামত টাকার বিনিময়ে ভালো রেজাল্ট দিয়ে সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন,কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আর কোনো কর্মকর্তা এ সিন্ডিকেটে জড়িত কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএমপির ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান (এডিশনাল ডিআইজি) জানান,গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম সোমবার ভোররাত্রি থেকে নজরদারিতে রেখে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকালে কাছাকাছি দুইটি বাসায় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার,ল্যাপটপ,প্রিন্টার,কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরিকৃত শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়ে়ছে। এ সকল কম্পিউটার প্রিন্টার ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়ে়ক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি আসল সার্টিফিকেট, মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড,অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্র করা সার্টিফিকেটগুলোকে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়ে়ছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার,রেজিস্ট্রেশন নাম্বার গুলোকে সার্স করলে সার্টিফিকেটগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।
তিনি আরো জানান,একেএম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালে। বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন,রোল নাম্বার, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি,সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেয়া,ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা,কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে।
মশিউর রহমান বলেন,সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, কতজন ফর্ম ফিলআপ করে রোল নাম্বার পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নাই আবার কতজন কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হয়েছে তার সব তথ্যই তার কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্য ভান্ডার,কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কতৃপক্ষ,সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ প্রতিমাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছে। শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করে আসছে। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতো যে,তারা অরজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে যা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।
ডিবির এ কর্মকর্তা জানান,২০১৭ সালেও মার্কশিট-সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচুতো করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হয়ে সে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রজ্জু হওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডিআই/এসকে