ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
কালীগঞ্জে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী
রাজাপুরে পুষ্টি ও কৃষি উদ্যোক্তা বিকাশে ৭০জন কৃষক-কৃষানীদের ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস’ প্রশিক্ষণ
হাসিনা,কামাল ও আছাদুজ্জামানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গুম কমিশনে অভিযোগ দিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন
আমাদের সাপোর্ট টিম হাটগুলোতে কাজ করছে,অভিযোগ করলে ব্যবস্থা: র‍্যাব
আত্মসমর্পণকারী ১২৭ জলদস্যুকে চট্টগ্রাম র‍্যাবের ঈদ উপহার
ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছুটি বাতিল
ভোলায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুর্ধর্ষ সিরাজ বাহিনীর দুই সদস্য আটক
আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী থেকে কোরবানির পশুর হাট,যেকোনো অপতৎপরতা রুখতে তৎপর র‍্যাব:মুখপাত্র
গাইবান্ধায় শয়নকক্ষে দম্পতির ঝুলন্ত মরদেহ
কুড়িগ্রামে এনসিপি’র জেলা সমন্বয় কমিটি গঠিত
পশু কেনাকাটা ও ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে র‍্যাব
শাহজালালে ইমিগ্রেশন পুলিশের সার্ভার সচল: এসবি
নবীগঞ্জে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা: আতঙ্কে ১২টি পরিবার
কলাপাড়ায় জলবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ ১৬০ পরিবার পেল ত্রান সহায়তা
পঞ্চগড়ে কাগজিয়াপাড়া গোরস্থান থেকে ৫ টি কঙ্কাল চুরি

সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার/ ইউপি সদস্যকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি

১৯ বছর আগে ২০০৬ সালে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেনকে (৫০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফাঁসির আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনকে (৬৪) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব জানায়, ২০০৭ সালে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে পালিয়ে যান প্রধান আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থাকতো। সর্বশেষ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন অবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ১ ফেরুয়ারি রোহিতপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কেরানীগঞ্জের সৈয়দপুর ঘাটে সন্ত্রাসীরা দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং ওই দিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত আনোয়ার মৃত্যুবরণ করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামি করে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-২, তারিখ ৩ ফেরুয়ারি, ২০০৬।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, একজন ইউপি সদস্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তখন এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের তৈরি হয়েছিল এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছিল। দায়েরকৃত হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০০৮ সালের ৩১ মে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্ব প্রদানকারী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

পরবর্তীতে আদালত ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট বিচারিক কার্যক্রম শেষে পলাতক আসামি কামাল উদ্দিনসহ ২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব নজরদারি অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯ এর সহযোগিতায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইউনিয়ন পরিষদের ইউপিমেম্বার আনোয়ার হোসেনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফাঁসির পলাতক প্রধান আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার কামাল উদ্দীন ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, নিহত ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে আড়তদারী ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম, মাদকসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ, ভূমি দস্যুতাসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করতেন বিধায় কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের তরুণ ও যুব সমাজের মাঝে তার ভাল জনপ্রিয়তা ছিল।

এ কারণে তিনি স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ভূমি দস্যুদের শত্রুতে পরিণত হয়। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাকে দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় আনোয়ার হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় তাকে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাতে সেখান থেকে এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ভোরবেলায় এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি বলেন, কেরাণীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। কামাল উদ্দীন ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী দল গঠন করে এবং অবৈধ বালুর ব্যবসা, জোরপূর্বক ভূমি দখল, ত্রাণের মালামাল কুক্ষিগত করা ও এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। নিহত আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন অবৈধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রতিবাদ করতো। গ্রেফতার কামালের এমন অবৈধ ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় নিহত আনোয়ার স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। গ্রেফতার কামালের অবৈধ বালুর ব্যবসা ও ভূমি দস্যুতা নিয়ে তৎকালীন বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পেছনে আনোয়ার হোসেনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করে গ্রেফতার কামাল।

এ জন্য আনোয়ারের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে আনোয়ারকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে গ্রেফতার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউপ সদস্য আনোয়ার ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর ঘাটে মাছের আড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নদী পার হওয়ার উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠার সময় গ্রেফতার কামালের নেতৃত্বে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আনোয়ার হোসেনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে আনোয়ার হোসেনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে গ্রেফতার কামালসহ তার সন্ত্রাসী দল দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের স্ত্রী কর্তৃক কেরাণীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের খবর পেয়ে গ্রেফতার কামাল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করে এবং পুনরায় সেখানে বিয়েও করেন। মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থাকতো। সর্বশেষ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন অবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ