ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
দেবীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় জিদান নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু
উপকূল ও নদী তীরবর্তী অঞ্চল এবং সুন্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রেখে চলছে কোস্ট গার্ড
মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার মিল্টন দত্ত
প্রবাসী আল আমীনের লাশ দেখে পরিবারে চলছে শোকের মাতম
নাটোরে বিএসটিআইয়ের অভিযানে তিন প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা
পারভেজ হত্যা মামলায় এবার আসামি মাহাথির গ্রেফতার
চাঁদপুর জেলা কৃষকলীগের সভাপতি দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী
রায়পুরে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী জসিম হত্যা: র‍্যাবের হাতে মামলার ১৪ আসামি গ্রেফতার
তানোরে বাধাইড় ইউপি এলাকায় এমপি প্রার্থী তারেকের গনসংযোগ
আত্রাইয়ে ১১জন মাদক সেবীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড
শিক্ষক মেলবন্ধন ২০২৫’ এ শিক্ষক সম্মাননা পেলেন হাবিবুল্লাহ্
মোহাম্মদপুরে সাড়াশি অভিযান,গ্রেফতার ১৯
সেনা অভিযানে দেশীয় অস্ত্র-গুলিসহ ডাকাত ও কিশোর গ্যাং লিডার গ্রেফতার
কালকিনি পৌরসভায় উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত

রমজানের আগেই বেড়েছে খেজুর-ছোলার দাম

ডেস্ক রিপোর্ট:

রমজান মাস আসতে আর দুই মাসও বাকি নেই। এই মাসে ইফতারির জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হয় খেজুরের। তার পরও বছরের ব্যবধানে খেজুরের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চশুল্ক আরোপ ও ডলারসংকটের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে খেজুর। কারণ অনেকেই আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। রমজান মাসে খেজুরের যে চাহিদা তার অর্ধেকও এলসি খোলা হয়নি। এই অবস্থা চলতে থাকলে চরমভাবে খেজুরের সংকট দেখা দেবে। অধিকাংশ মানুষই ইফতারে এই ফলটি রাখতে পারবেন না। ছোলার দামও সেই পথে হাঁটছে। ডলারসংকটের কারণে আমদানি কমে গেছে। সরবরাহ বাড়ছে না। ফলে বছরের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। রমজান মাস না আসতেই চিনি, তেলের দামও বৃদ্ধির অপেক্ষায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।

করোনার ধকল কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দাবানলে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ডলারসংকটের কারণে অধিকাংশ পণ্যের আমদানিতেও ধাক্কা লেগেছে। ঠিকমতো পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এসব কারণে মূল্যস্ফীতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাধ্য হয়ে সরকার গঠন করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনও আগামী রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সংকট দূর হবে না। কারণ রমজান মাসে ইফতারির জন্য প্রথম ও প্রধান আইটেম খেজুর। এটা সম্পূর্ণ আমদানি করতে হয়। খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ৯০ হাজার মেট্রিক টন থেকে এক লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে লাগে ৫০-৬০ হাজার টন। কিন্তু রমজান মাস আসার আগেই দাম অনেক বেড়ে গেছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, অন্য বছরে এটা শুল্কমুক্ত থাকলেও এবারের বাজেটে বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে প্রতি কেজি খেজুরে সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫ টাকা বাড়তি কর দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ অন্যান্য বছরে যে খুজর ১০০ টাকায় পাওয়া যেত এবারে সেটা কিনতে ১৬৫ টাকা লাগছে। দাম অনেক বেড়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, এবারের রোজায় অধিকাংশ মানুষের পাতে খেজুর জুটবে না। বছরের ব্যবধানে সুন্নতি এই পণ্যটি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কারণ হলো আগে এর কোনো কর দিতে হতো না। চলতি অর্থবছরে হঠাৎ করে সিডি, ভ্যাট, আরডি, এআইটি, এটি মিলে প্রায় ৬৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে প্রতি কার্টনে (১০০০ কেজি) এক হাজার ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু দিতে হলেও বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ডলার দিতে হচ্ছে। এসব কারণে আগে যেখানে এক কেজি প্যাকেট খেজুরে ১০ টাকা দিতে হতো, বর্তমানে লাগছে ১৭৬ টাকা। আর প্রতি কেজি বস্তা খেজুরে আগে ৫ টাকা দিতে হলেও বর্তমানে ৭০ টাকা দিতে হচ্ছে। এভাবে উচ্চশুল্ক আরোপের কারণে অনেকেই খেজুর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেকও এলসি খোলা হয়নি। কারণ এক কনটেইনারে ৭০-৮০ লাখ টাকা লাগে। এভাবে চলতে থাকলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম আরও বেড়ে যাবে।

এই ফল ব্যবসায়ী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন রমজান মাসে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা হবে। কিন্তু সরকার খেজুরের শুল্ক না কমালে সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই পণ্যটি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আবার এলসি খোলার ৩০-৪০ দিন পর পণ্য দেশে আসে। তাই (আগামীকাল) বুধবারই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে চিঠি দেওয়া হবে। সরকার শুল্ক না কমালে অনেকেই চোখে দেখবে না খেজুর।

এদিকে খোদ সরকারি সংস্থা টিসিবিও বলছে, বছরের ব্যবধানে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। গত বছর এই সময়ে ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ২৫০-৪৫০ টাকার কমে পাওয়া যায় না। বাস্তবে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে কেজিতে খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

এদিকে ইফতারির আরেক আইটেম ছোলার দামও অনেক বেড়ে গেছে। ডলারসংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজি ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে। বছরের ব্যবধানেও অনেক দাম বেড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, দেশে ছোলার চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। আমদানি হয় প্রায় দুই লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা এক লাখ টন। কিন্তু আগেই বাড়ছে দাম। কারওয়ান বাজারের মেসার্স একতা ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী রায়হান এই প্রতিবেদককে জানান, ধাপে ধাপে বাড়ছে ছোলার দাম। সর্বশেষ পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। ভালোটা ১০০ টাকা কেজি। সেই ছোলা খুচরা বাজারে ১১০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি মার্কেটের মেসার্স পারভেজ স্টোরের মালিক পারভেজ বলেন, ছোলা ১১০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

তাদের কথা অনুযায়ী বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা দাম বাড়াই না। ব্যাংক এলসি খুলছে না। তাই সরবরাহ কমে যাচ্ছে। দাম বাড়ছে। ছোলা সম্পূর্ণটাই বলা যায় আমদানিনির্ভর।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডালের দামও বেড়ে যাচ্ছে। রমজান মাসে ডালেরও চাহিদা বাড়ে। সারা বছরে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় ছয় লাখ টন। উৎপাদন হয় দুই লাখ টনের মতো। বাকি চার লাখ টন আমদানি করতে হয়। এই ডালে কোনো শুল্ক আরোপ করা হয় না। কিন্তু ডলারসংকটের কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না।

এদিকে রমজান মাসে সারা দিনের পানির চাহিদা মেটাতে শরবতের জন্য চিনিরও প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চাহিদাও দ্বিগুণ হয়ে যায়। এফবিসিসিআইয়ের তথ্যমতে, দেশে বার্ষিক চিনির চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। গড়ে মাসে দেড় লাখ টন লাগে। তবে রমজান মাসে লাগে তিন লাখ টন।

রমজান মাসে চিনির সরবরাহ ও সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা খবরের কাগজকে বলেন, রমজানে চিনি -তেলের চাহিদা বাড়ে। এসব পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি। ডলারসংকটও রয়েছে। এ ব্যাপারে কালকে (আজ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মিটিং আছে। যেভাবে সরকার যা বলবে, সেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্র: খবরের কাগজ

শেয়ার করুনঃ