
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৮৬তম বাফা কোর্স, ডিরেক্ট এন্ট্রি-২০২৫এ, এসপিএসএসসি-২০২৫এ এবং বিএলপিসি-২০২৫এ কোর্সের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (গ্রীষ্মকালীন)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুচকাওয়াজের মাধ্যমে একজন নারী অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৪৫ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন।
বুধবার (২১ মে) যশোরে অবস্থিত বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটিং অফিসারদের মাঝে পদক এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন।
অফিসার ক্যাডেট মো. মুতাসিম বিল্লাহ তানিম ৮৬তম বাফা কোর্সের প্রশিক্ষণে সার্বিক কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’, অফিসার ক্যাডেট তাকি তাহমিদ নিলয় উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ এবং অফিসার ক্যাডেট মো. মুতাসিম বিল্লাহ তানিম জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ড্যান্টস্ ট্রফি’ লাভ করেন।
এছাড়াও ৮৬তম বাফা কোর্সে (গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চ) সেরা কৃতিত্বের জন্য অফিসার ক্যাডেট মাহাদী হাসান তালহা ‘বিমান বাহিনী প্রধানের ট্রফি’ লাভ করেন।
উল্লেখ্য, এই গ্রীষ্মকালীন টার্মে বীর উত্তম এ কে খন্দকার স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমি পতাকা লাভ করে।
নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎবরণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজকের এ বিশেষ দিনে তিনি আরও স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে অটল মনোবল সৃষ্টিকারী অকুতোভয় ও সফল বিমান অভিযানের পুরোধা ও দুঃসাহসিক আকাশ যুদ্ধ পরিচালনাকারী কিলো ফ্লাইটের সদস্যদের, যাদের দৃপ্ত প্রত্যয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত ও সুগম হয়েছিল।
নৌ বাহিনী প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিমান বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা দেশের আপামর জনগণের স্বার্থে সর্বদা সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবস্থান আগামী দিনগুলোতে আরও সুদৃঢ় ও সুসংহত হবে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সকল সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মক্ষেত্র ও চাহিদা বিস্তৃত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে করা হয়েছে আরও দক্ষ ও যুগোপযোগী।
এডমিরাল এম নাজমুল হাসান আরও বলেন, বিমান বাহিনীর ভবিষ্যত প্রজন্মের উন্নততর প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান ও সিমুলেটর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির প্রশিক্ষণ মানের সুনাম আজ আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিতি লাভ করেছে। বিমান বাহিনীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে বহু দেশী-বিদেশী সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ। বাংলাদেশ সেনা ও নৌ বাহিনীর বৈমানিকরা বিমান বাহিনী একাডেমী থেকে সাফল্যজনকভাবে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
এ একাডেমী থেকে এ যাবত সফলতার সাথে ৩০ জন বিদেশী ফ্লাইট ক্যাডেট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এতে বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও সুদৃঢ় হয়েছে।
তিনি সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাফল্য কামনা করেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির সকল সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে একজ নারী অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৪৫ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন।
অফিসার ক্যাডেট একাডেমি সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. মুতাসিম বিল্লাহ তানিম আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী একাডেমির বিভিন্ন প্রকার বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট, আকর্ষনীয় এ্যারোবেটিক ডিসপ্লে এবং বিমান বাহিনীর চৌকশ প্যারাট্রুপার হেলিকপ্টার থেকে দৃষ্টিনন্দন প্যারা জাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, সামরিক ও অসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিআই/এসকে